বিপ্লবী আদর্শ ও নেপোলিয়ন : নবম শ্রেণির ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় বিপ্লবী আদর্শ ও নেপোলিয়ন থেকে সমস্ত ধরণের প্রশ্নের আলোচনা এই লেখায় আছে।
অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনার পাশাপাশি MCQ SAQ ব্যাখ্যাধর্মী রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে এই পোস্টে।
বিপ্লবী আদর্শ ও নেপোলিয়ন, Class 9 History
ভূমিকা
ডিরেক্টরি শাসন (Rule of Directory): ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের শেষ পর্বে রচিত সংবিধান অনুসারে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা পাঁচ সদস্যের একটি পরিষদ বা ডিরেক্টরির হাতে প্রদান করা হয়। ডিরেক্টরি শাসনের ভিত্তি ছিল উদীয়মান বিত্তবান বুর্জোয়া সম্প্রদায়। এরা মূলত ছিলেন অপদার্থ ও দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই ডিরেক্টরির আমলে ফ্রান্সের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন (David Thomson) মনে করেন ডিরেক্টরির শাসনই ফ্রান্সে বিপ্লবের ধ্বংসকে সম্পূর্ণ করেছিল (“…they presided over the final liquidation of the Revolution.”)
পাঁচজন ডিরেক্টর (Directors) :
- [1] বারাস (Barras)
- [2] লা র্যাভেলিয়ে (La Revelliere)
- [3] লার্জুনায়ের (Le Tourneur)
- [4] রিউবেল (Rewbell)
- [5] কারনো (Carnot)
‘বাসকুল’ নীতি: রাজতন্ত্রী এবং জেকোবিন (Jacobin)- এই দুটি দল প্রথম থেকেই ডিরেক্টরির শাসনের বিরোধিতা করেছিল। তাই ডিরেক্টররা এই দুটি দলের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলার নীতি গ্রহণ করেন। এই নীতিকেই ‘বাসকুল’ নীতি বলে।।
বেবিউফ (Babeuf)-এর বিদ্রোহ: দুর্নীতিগ্রস্ত ডিরেক্টরি শাসনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে যে একাধিক বিদ্রোহের উদ্ভব হয়, সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে সংঘটিত ফ্রাঁসোয়া বেবিউফ (Babeuf)-এর বিদ্রোহ। ফ্রাঁসোয়া বেবিউফ ছিলেন ‘সোসাইটি অফ দ্য প্যাথিয়ন’ (Society of the Pantheon) নামক বিপ্লব সংস্থার সদস্য। তিনি নিজে ‘প্যান্থিয়ন ক্লাব’ (Pantheon Club) নামে একটি দলের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘ট্রিবিউন’ (Tribune) পত্রিকায় সম্পাদনার কাজ করতেন। ডিরেক্টরির বিরুদ্ধে চক্রান্তের জন্য তাঁকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়।
অনেক ঐতিহাসিক তাঁকে কার্ল মার্কসের অগ্রদূত বলে মনে করেছেন।
তিনজন কনসাল (Consul) :
- [1] নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (Napoleon Bonapart)
- [2] আবে সিয়েস (Abbe Sieyes)
- [3] রজার ডুকোস (Roger Ducos)
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (Napoleon Bonapart):
নেপোলিয়ন ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ইটালির অন্তর্গত ভূমধ্যসাগরের কর্সিকা দ্বীপের অ্যাজাক্কিও (Ajaccio) শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
নেপোলিয়ন বংশসূত্রে ফরাসি, কিন্তু জন্মসূত্রে ইতালীয় ছিলেন। কারণ তাঁর জন্মস্থান কর্সিকা দ্বীপ ছিল ইটালির অন্তর্গত। তাঁর জন্মের এক বছর আগে ফ্রান্স কর্সিকা দ্বীপ দখল করে নেয়।
কনস্যুলেটের (Consulate) শাসনে প্রথম কনসাল নেপোলিয়ন : ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ডিরেক্টরি শাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে ‘কনস্যুলেট’ নামে এক নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এতে নেপোলিয়ন ছিলেন প্রথম কনসাল। অপর দুজন কনসাল ছিলেন আবে সিয়েস (Abbe Sieyes) ও রজার ডুকোস (Roger Ducos)
কার্লো ও লেটিজিয়া বোনাপার্ট
১৮০২ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে তিনি নিজে সারাজীবনের জন্য কনসাল নিযুক্ত হন।
৫) কনস্যুলেটের শাসনে (১৭৯৯-১৮০৪ খ্রি.) নেপোলিয়ন ছিলেন সর্বেসর্বা। কনস্যুলেটের শাসনে একটি নতুন সংবিধান রচিত ও হয়েছিল (১৭৯৯ খ্রি.)। এটি ‘অষ্টমবর্ষের সংবিধান’ নামে পরিচিত। এর রচয়িতা ছিলেন আবে সিয়েস।
৩) ফেলিক্স মার্কহাম তাঁর ‘নেপোলিয়ন অ্যান্ড দি অ্যাওকেনিং অফ ইউরোপ’ (Napoleon and the Awakening of Europe) গ্রন্থে এই সংবিধানের প্রকৃতি প্রসঙ্গে একটি সুন্দর কথোপকথন উল্লেখ করেছেন। সংবিধানটি রচিত হওয়ার পর এটি জনগণকে শোনানো হয়েছিল। অনেকে তা মন দিয়ে শুনেছিলেন। সেসময় অনুপস্থিত এক মহিলা তাঁর প্রতিবেশীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে নতুন সংবিধানে কী বলা হয়েছে? এর উত্তরে তাঁর প্রতিবেশী বলেছিলেন, ‘নেপোলিয়ন’।
আসলে নতুন সংবিধানে বিভিন্নভাবে প্রথম কনসাল বা নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত ক্ষমতাই জাহির করা হয়েছিল।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সের ঘরে-বাইরে বিপদের ভ্রুকুটি। এমতাবস্থায় ফ্রান্সের ভাগ্যাকাশে ধূমকেতুর মতো উদিত হন ফ্রান্সের ভাগ্যবিধাতা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। নিজ বুদ্ধি ও বাহুবলকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফ্রান্সের ক্ষমতা দখল করেন। বিপ্লবপ্রসূত সমতার আদর্শকে সম্মান জানালেও চরম সাম্রাজ্যবাদ নীতি দ্বারা ইউরোপের বহু রাজ্য তিনি ফরাসি সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তবে কালের নিয়মেই নেপোলিয়ন তথা সুবিশাল ফরাসি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ক্ষমতালাভ : নেপোলিয়ন ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভূমধ্যসাগরের কর্সিকা দ্বীপের অ্যাজাকসিয়ো প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। সামান্য সৈনিক হিসেবে নিজের জীবন শুরু করলেও অসামান্য প্রতিভা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সম্বল করে তিনি ফরাসি জাতির সম্রাট হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বাহিনী তুলো বন্দর আক্রমণ ও দখল করলে নেপোলিয়ন তা পুনরুদ্ধার করেন। এই সাফল্যের জন্য তাঁকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। এরপর ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের উত্তেজিত জনতা জাতীয় মহাসভা আক্রমণ করলে তিনি তা প্রতিহত করেন। এই সাফল্যের পর তিনি মেজর জেনারেল পদ লাভ করেন। এরপর তিনি দেশের হয়ে বেশ কিছু সাফল্য এনে দেন। যেমন- পোপের রাজ্য আক্রমণ, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ক্যাম্পো-ফর্মিও সন্ধি, পিরামিডের যুদ্ধে ) জয়লাভ ইত্যাদি জনগণের সমর্থন ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তিনি ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারী ডাইরেকটরি শাসনের অবসান। ঘটান এবং কনসুলেট শাসনের সূচনা করেন। এই শাসনব্যবস্থায় তিনি স্বয়ং হলেন প্রথম কনসাল। এরপর ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেকে ফরাসি সম্রাট বলে ঘোষণা করেন।
সংস্কার : কোড নেপোলিয়ন : নেপোলিয়নের অন্যতম কীর্তি হল ফরাসি আইন সংহিতা বা কোড নেপোলিয়ন সংকলন। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন আইন সংকলিত করে ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রবর্তন করা হয়। এই আইন সংহিতায় মোট ২২৮৭টি আইন বিধিবন্ধ হয়। এটি ৩টি ভাগে বিভক্ত ছিল, যথা- দেওয়ানি বিধি, ফৌজদারি বিধি ও বাণিজ্যিক বিধি। নেপোলিয়নের আইন সংহিতা গড়ে উঠেছিল মূলত প্রাকৃতিক আইন ও রোমান আইনের সংমিশ্রণে। ঐতিহাসিক লেফেভর ‘কোড নেপোলিয়ন’-কে ফরাসি সমাজের বাইবেল বলে অভিহিত করেছেন। তবে এটি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। এখানে নারী স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কেও তেমন নজর দেওয়া হয়নি।
অর্থনৈতিক সংস্কার : নেপোলিয়নের অর্থমন্ত্রী গোদিন দেশের নানাবিধ অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। তিনি সকল সম্প্রদায়ের ওপরই কর আরোপ করেন। ফ্রান্সের সার্বিক আর্থিক উন্নতির জন্য তিনি ব্যাংক অব ফ্রান্স, চেম্বার অব কমার্স ও স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন।
ধর্মীয় সংস্কার : নেপোলিয়ন পোপ সপ্তম পায়াসের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন যা ‘কনকরডাট অব ১৮০১’ বা ধর্ম মীমাংসা চুক্তি নামে খ্যাত। এই চুক্তিতে যাজকগণ সরকারি বেতনভুক কর্মচারীতে পরিণত হয়। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে স্বীকৃত হয়।
নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত : ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সম্রাট হওয়ার পর নেপোলিয়ন অনায়াসেই ফ্রান্সে একটি এককেন্দ্রিক স্বৈরাচারী শাসন প্রবর্তন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং ফরাসি বিপ্লবের ‘সাম্য’ ও ‘মৈত্রী’-র আদর্শ অনুসরণ করেন এবং জনগণের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে বিপ্লবের আর এক মহান আদর্শ ‘স্বাধীনতা’ বর্জন করেন। নেপোলিয়ন ঘোষণা করেছিলেন “আমি বিপ্লবের সন্তান”। আবার তিনি এও স্বীকার করেছিলেন “আমি বিপ্লবকে ধ্বংস করেছি”। তিনি স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র রক্ষা করার কোনো চেষ্টা করেননি। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সর্বজনীন ভোটাধিকার কেড়ে নেন। নেপোলিয়নের এই সমস্ত পদক্ষেপ ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শের বিরোধী ছিল।
ইউরোপের পুনর্গঠন : নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ইউরোপের মানচিত্র বদলে দেয়। এই পুনর্গঠন এতটাই ব্যাপক ছিল যে পূর্বপরিচিত ইউরোপকে আর চেনা যায়নি। নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার শক্তি দুর্বল করার লক্ষ্যে বাটাভিয়া ও তার নিকটবর্তী কিছু ক্ষুদ্র রাজ্য নিয়ে এক রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। জার্মানিকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নেপোলিয়নের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কীর্তি ছিল ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘রাইন রাষ্ট্রসংঘ’ বা ‘কনফেডারেশন অব রাইন’ গঠন। ডাইরেকটরির আমলে ইটালিতে সিজালপাইন প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটানো হয়। পরে এটির নাম হল ইটালি প্রজাতন্ত্র। প্রাশিয়ার অন্তর্গত পোল্যান্ড নিয়ে নেপোলিয়ন ‘গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়ারশ’ গঠন করেন। এছাড়া তিনি বাটাভীয় প্রজাতন্ত্রকে হল্যান্ড রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি সুইটজারল্যান্ডে হেলভেটিক প্রজাতন্ত্রের স্থলে গঠন করেন ‘সুইস কনফেডারেশন’।
নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া : নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ ও ইউরোপের পুনর্গঠন নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ইউরোপের জার্মানি, ইটালি, প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, হল্যান্ড এবং বেলজিয়ামে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতার এক বছরের মধ্যে শুরু হয় নেপোলিয়ন বিরোধী ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ (Battle of Nations)। জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়ায় নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যে ভাঙন ধরে। রাইন রাষ্ট্রসমূহ ভেঙে যায়। রাইন রাষ্ট্রসংঘের রাজারা নেপোলিয়ন-বিরোধী শক্তিজোটে যোগ দেন। রাশিয়া, প্রাশিয়া ও ইংল্যান্ড চতুর্থ শক্তিজোট বা মিত্রপক্ষ গঠন করে। এই শক্তিজোটে পরে তুরস্ক, অস্ট্রিয়া ও সুইডেন যোগ দেয়। এই চতুর্থ শক্তিজোট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা শুরু করে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ‘উপদ্বীপের যুদ্ধ’ প্রমাণ করে যে, নেপোলিয়ন অপরাজেয় নয়।
মহাদেশীয় ব্যবস্থা : নেপোলিয়ন আর্থিক দিক থেকে ‘সমুদ্রের রানি’ ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করার জন্য আর্থিক অবরোধের যে নীতি ঘোষণা করেন তা মহাদেশীয় ব্যবস্থা নামে পরিচিত। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ‘বার্লিন ডিক্রি’ দ্বারা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা জারি করেন। এর দ্বারা ইংল্যান্ডের পণ্যবাহী জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এর প্রত্যুত্তরে ইংল্যান্ড ওই বছর ‘অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল’ জারি করে। এতে বলা হয় ফ্রান্স ও তার মিত্র দেশগুলির বন্দরে অন্য কোনো দেশের জাহাজ, এমনকি নিরপেক্ষ দেশের জাহাজও প্রবেশ করতে পারবে না। এর জবাবে ফ্রান্স ‘মিলান ডিক্রি’, ‘ওয়ারশ ডিক্রি’ ও ‘ফন্টেন বু ডিক্রি’ জারি করে। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার দ্বারা নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে আর্থিক দিক থেকে পঙ্গু করতে চাইলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন এই ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেন।
রাশিয়া আক্রমণ : টিলসিটের সন্ধির দ্বারা ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে মৈত্রী গড়ে ওঠে। মহাদেশীয় ব্যবস্থাসহ একাধিক কারণে ফরাসি-রুশ মৈত্রীতে চিড় ধরে। ব্রিটিশ পণ্যের ওপর নির্ভরশীল রাশিয়া প্রথমে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মেনে নিলেও পরে জনগণের চাপে রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পণ্যের জন্য রাশিয়ার বন্দরগুলি খুলে দেন। ক্ষুদ্ধ নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে ৬ লক্ষ সৈন্যের গ্র্যান্ড আর্মি নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। রুশ সেনাপতি কুটুজোভ ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণ করেন। এই রণনীতিকে অনুসরণ করে গ্রাম ও শহরের শস্যভাণ্ডারগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পানীয় জলে বিষ প্রয়োগ করে এবং ক্রমশ পিছু হটতে হটতে ফরাসি বাহিনীকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকতে দেওয়া হয়। মস্কোর কাছে ‘বোরোডিনো’ নামক স্থানে উভয়পক্ষের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ফরাসি বাহিনী জয়লাভ করলেও সেই সময় রাশিয়ায় প্রচণ্ড শীত পড়ে, তুষারপাত শুরু হয়। ফলে ফরাসি সেনার রসদে ঘাটতি দেখা দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ‘টাইফাস’ নামক জ্বরের প্রকোপ। ফলে বেশিরভাগ ফরাসি সেনার শীত, জ্বর ও অনাহারে মৃত্যু হয়। বিপর্যস্ত সেনা, অপমানের বোঝা ও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে নেপোলিয়ন দেশে ফিরে আসেন।
একশত দিবসের রাজত্ব : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে লিপজিগের যুদ্ধে নেপোলিয়ন পরাজিত হন। এই যুদ্ধে ইউরোপের ১৩টি জাতি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। নেপোলিয়ন মিত্রশক্তির হাতে পরাজিত হয়ে ফন্টেন ব্লুর সন্ধি (১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ) স্বাক্ষরে বাধ্য হন। সন্ধির শর্তানুসারে নেপোলিয়নকে এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর নজর ছিল ফ্রান্সের সিংহাসনে। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে যখন মিত্রশক্তিবর্গ ভিয়েনা সম্মেলনে ব্যস্ত তখন নেপোলিয়ন দক্ষিণ ফ্রান্সে উপস্থিত হন। তিনি বুরবো বংশীয় অষ্টাদশ লুইকে সরিয়ে ফ্রান্সের সিংহাসন দখল করেন। একটানা তিনি ১০০ দিন (২০ মার্চ, ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯ জুন, ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) ফ্রান্সে রাজত্ব করেন। নেপোলিয়নের এই স্বল্পকালের শাসন ‘একশত দিবসের রাজত্ব’ নামে পরিচিত।
সেন্ট হেলেনায় নির্বাসন ও মৃত্যু : ফ্রান্সে নেপোলিয়ন ফিরে এলে চতুর্থ শক্তিজোট পুনরায় তৎপর হয়ে অস্ত্রধারণ করে। ওয়াটার লু যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটনের কাছে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হন। এরপর নেপোলিয়নকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। সেখানেই ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে কর্কটরোগে তিনি মারা যান।
চুম্বক
ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ | সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা |
ডিরেকটরি শাসন (১৭৯৫) :
- পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট শাসনব্যবস্থা
- বুর্জোয়া সম্প্রদায়ের হাতে ক্ষমতা
- সদস্যগণ অপদার্থ ও দুর্নীতিগ্রস্ত
- পাঁচ ডিরেকটর – বারাস, লা র্যাভেলিয়ে, লার্তুনায়ের, রিউবেল এবং কারনো।
ডিরেকটরি শাসন ও বিরোধিতা :
- বেবিউফের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ১৭৯৬
- রাজতন্ত্রী ও জ্যাকোবিনদের বিরোধিতা
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯ – ১৮২১ ) :
জন্ম | ১৭৬৯ খ্রি. ১৫ আগস্ট। ভূমধ্যসাগরের কর্সিকা দ্বীপের অ্যাজাক্কিও শহরে। |
জাতীয়তা | জন্মসূত্রে ইতালীয়। বংশসূত্রে ফরাসি। |
পিতা-মাতা | কার্লো বোনাপার্ট ও লেটিজিয়া |
পেশা | প্রথমে সাব-লেফটেন্যান্ট। পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও মেজর জেনারেল |
স্ত্রী | জোসেফাইন |
নেপোলিয়ন যুগ | ১৭৯৯ থেকে ১৮১৪ |
আত্মজীবনী | Nepoleonic Legend 1823আমিই বিপ্লবআমি বিপ্লবের সন্তানআমি বিপ্লবের ধ্বংসকারী |
কনস্যুলেটের শাসন (১৭৯৯) :
- নেপোলিয়ন কর্তৃক এর প্রতিষ্ঠা
- তিনজন কনসাল – নেপোলিয়ন, আবে সিয়েস ও রজার ডুকোস।
- প্রথম ও প্রধান কনসাল হলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
- ১৭৯৯ খ্রি. কনসুলেট শাসন কর্তৃক নির্মিত সংবিধান ‘অষ্টম বর্ষের সংবিধান’ (আবে সিয়েস)।
- ১৮০০ সালে ব্যাংক অব ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা।
- ১৮০১ সালে ধর্ম মীমাংসা চুক্তি।
- ১৮০২ সালে নেপোলিয়ন সারাজীবনের জন্য কনসাল নিযুক্ত হন।
- ১৮০২ সালে লিজিয়ন অব অনার প্রবর্তন।
- ১৭৯৯-১৮০৪ পর্যন্ত নেপোলিয়ন ছিলেন সর্বেসর্বা।
ফরাসি জাতির সম্রাট (১৮০৪) :
- ১৮০৪ খ্রি. গনভোটে ফরাসি জনগণ নেপোলিয়নকে বেছে নেয়।
- ১৮০৪ সালের ২ ডিসেম্বর সপ্তম পায়াস নেপোলিয়নকে সম্রাট পদে অভিষিক্ত করেন।
- কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তন ১৮০৪ থেকে ১৮০৭। দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান।
নেপোলিয়নের মন্তব্য :
- ফ্রান্সের রাজমুকুট মাটিতে পড়েছিল, আমি তরবারির সাহায্যে তা তুলে নিয়েছি।
- আমি মিশরে মুসলমান, ফ্রান্সে ক্যাথলিক
মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা (১৮০৬ – ১৮১০) :
বার্লিন ডিক্রি (১৮০৬) | ফ্রান্স | বন্দরে জাহাজ ঢুকতে না দেওয়া |
অর্ডার ইন কাউন্সিল (১৮০৭) | ইংল্যান্ড | বার্লিন ডিক্রির প্রত্যুত্তর। জাহাজ ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা |
মিলান ডিক্রি (১৮০৭) | ফ্রান্স | অর্ডার ইন কাউন্সিলের প্রত্যুত্তর। ইংল্যান্ডের কাছে অনুমতি নিলে জাহাজ বাজেয়াপ্ত হবে |
ওয়ারশ ডিক্রি (১৮০৭) | ফ্রান্স | নির্দেশ অমান্য হলে বাজেয়াপ্ত দ্রব্যে আগুন লাগানো হবে |
ফন্টেনব্ল্যু ডিক্রি (১৮১০) | ফ্রান্স | নির্দেশ অমান্য হলে বাজেয়াপ্ত দ্রব্যে আগুন লাগানো হবে |
আলোচিত টপিক
এম.সি.কিউ.
- নেপোলিয়নের জন্ম হয় – অ্যাজাক্কিও শহরে/ মিলান শহরে/ প্যারিস শহরে/ নাটাল শহরে।
- নেপোলিয়ন ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীতে যোগ দেন – ১৭ বছর বয়সে/ ১৮ বছর বয়সে/ ১৯ বছর বয়সে/ ২০ বছর বয়সে।
- নেপোলিয়ন তুলোঁ বন্দর পুনরুদ্ধার করেন – ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে/ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে/ ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে।
- নেপোলিয়নকে ‘মুক্তিদাতা’ বলে সম্ভাষণ করেন – ফরাসিরা/ জার্মানবাসীরা/ ইটালীয়রা/ রোমানরা।
- ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ফ্রান্সের ভাগ্যনিয়ন্তা ছিলেন – পোপ/ ষোড়শ লুই/ অষ্টাদশ লুই/ নেপোলিয়ন।
- নেপোলিয়ন সম্রাট হয়েছিলেন – যাজকদের দ্বারা/ গণভোটের দ্বারা/ উত্তরাধিকার সূত্রে/ উপরের কোনোটিই নয়।
- নেপোলিয়নকে গণভোটের দ্বারা সম্রাট হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন – জনগণ/ রাজা/ যাজক/ সিনেট।
- নেপোলিয়ন পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটান – ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে।
- নেপোলিয়ন ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রণয়ন করেছিলেন – পুলিশদের দ্বারা/ আইনবিদদের দ্বারা/ বিচারকদের দ্বারা/ যাজকদের দ্বারা।
- ‘কোড নেপোলিয়ন’-এ ধারা আছে – ১২০০ টি/ ১৪০০ টি/ ১৬০০ টি/ ২২৮৭ টি।
- জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছিলেন – ১টি/ ২টি/ ৩টি/ ৪টি।
- ‘কনফেডারেশন অফ রাইন’ গঠন করেন – নেপোলিয়ন/ নেলসন/ প্রথম আলেকজান্ডার/ ষোড়শ লুই।
- নেপোলিয়ন ‘কনফেডারেশন অফ রাইন’ গঠন করেন – জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে/ ফ্রান্সকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে/ জার্মানিকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে/ ইংল্যান্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে।
- নেপোলিয়ন বাস্তবায়িত করেন বিপ্লবের – সাম্যের আদর্শকে/ মৈত্রীর আদর্শকে/ স্বাধীনতার আদর্শকে/ ধর্মীয় আদর্শকে।
- নেপোলিয়ন কঠোর হাতে দমন করেন বিপ্লবের – সাম্যের আদর্শকে/ ধর্মীয় আদর্শকে/ মৈত্রীর আদর্শকে/ স্বাধীনতার আদর্শকে।
- নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা যে দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করার জন্য চালু করেছিলেন, সেটি হল – ইংল্যান্ড/ ফ্রান্স/ ইটালি/ জার্মানি।
- ট্রাফালগারের যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাপতি ছিলেন – উইলিয়ম জেমস/ উইলিয়ম হান্টার/ নেলসন/ জর্জ ওয়াশিংটন।
- ট্রাফালগারের যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল – ইংল্যান্ড/ ফ্রান্স/ রাশিয়া/ পোর্তুগাল।
- নেপোলিয়ন ইংলিশ চ্যানেল পার করে সরাসরি ইংল্যান্ড আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন – ১ বার/ ৩ বার/ ২ বার/ উপরের কোনোটিই নয়।
- নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে পোর্তুগাল ও স্পেনের বিদ্রোহকে একত্রে বলা হয় – আইবেরীয় উপদ্বীপের বিদ্রোহ/ ফরাসি বিদ্রোহ/ সিপাহি বিদ্রোহ/ স্পেনীয় বিদ্রোহ।
- ‘আইবেরীয় উপদ্বীপ’ বলা হয় – স্পেন ও পোর্তুগাল অঞ্চলকে/ আয়ারল্যান্ডকে/ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স অঞ্চলকে/ রাশিয়াকে।
- ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ গ্রন্থের রচয়িতা – শেকসপীয়র/ লিও টলস্টয়/ বার্নাড শ/ রুশো।
- ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর বিষয়বস্তু হল – ফরাসি বিপ্লব/ আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ/ স্পেনের গৃহযুদ্ধ/ নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান।
- নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করেন – ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে।
- নেপোলিয়ন মস্কো দখল করেন – ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে।
- ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ/ স্পেনের যুদ্ধ/ লিপজিগের যুদ্ধ/ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
- ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হন – নেলসন/ জার প্রথম আলেকজান্ডার/ নেপোলিয়ন/ অষ্টাদশ লুই।
- সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নেপোলিয়নকে নির্বাসিত করা হয় – ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে/ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে।
- সেন্ট হেলেনা দ্বীপ অবস্থিত – প্রশান্ত মহাসাগরে/ আটল্যান্টিক মহাসাগরে/ ভারত মহাসাগরে/ উপরের কোনোটিই নয়।
- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট জন্মগ্রহণ করেন। – (১৬৬৯/১৭৬৯/১৯৪৭) খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট।
- নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জন্ম হয় – (কর্সিকা / এলবা/ সেন্ট হেলেনা) দ্বীপে।
- নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বাবার নাম – (কার্লো / বিপ্লব / লেটিজিয়া) বোনাপার্ট।
- নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মায়ের নাম – (কার্লো / লেটিজিয়া / সেন্ট হেলেনা)।
- অস্ট্রিয়ার রাজধানী ছিল – (ভিয়েনা / প্যারিস / ভার্সাই)।
- নেপোলিয়ন – (রাজতন্ত্র / ন্যাশনাল কনভেনশন / ডিরেক্টরি) শাসনের উচ্ছেদ করে কনস্যুলেট শাসন প্রবর্তন করেন।
- নেপোলিয়ন – (ন্যাশনাল কনভেনশন / ডিরেক্টরি / কনস্যুলেট) শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
- কনস্যুলেটের শাসনে নেপোলিয়ন ছিলেন (প্রথম / দ্বিতীয় / তৃতীয়) কনসাল।
- নেপোলিয়ন কনস্যুলেট শাসনের সূচনা করেন – (১৭৬৯/১৭৯৯/১৮০৪) খ্রিস্টাব্দে।
- ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন – (১০ বছরের জন্য / যাবজ্জীবন /৫ বছরের জন্য) কনসাল পদে নিযুক্ত হন।
- নেপোলিয়ন ‘ফরাসি জাতির সম্রাট’ উপাধি ধারণ করেন – (১৭৯৯/১৮০২/১৮০৪) খ্রিস্টাব্দে।
- নেপোলিয়নকে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে নটরদাম চার্চে সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত করেন পোপ – (সপ্তম পায়াস / পঞ্চম চার্লস / দ্বিতীয় পল)।
- কনস্যুলেট শাসনের সংবিধান রচনা করেছিলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ – (আবে সিয়েস / ভলতেয়ার / রুশো)।
- নেপোলিয়ন ব্যাংক অফ ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন – (১৮০০/১৭০০/১৯০০) খ্রিস্টাব্দে।
- নেপোলিয়নের সঙ্গে ধর্ম-মীমাংসা চুক্তি বা কনকর্ডাট স্বাক্ষর করেন পোপ – (ষষ্ঠ পায়াস / সপ্তম পায়াস / অষ্টম পায়াস)।
- ‘কোড নেপোলিয়ন’ নামকরণ করেন – (নেপোলিয়ন/ আবে সিয়েস / রজার ডুকোস)।
- কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তনের জন্য নেপোলিয়নকে দ্বিতীয় – (আলেকজান্ডার/ কনস্টানটাইন/ জাস্টিনিয়ান) বলা হয়।
- রাষ্ট্রের প্রতি সেবা ও আনুগত্যের পুরস্কার স্বরূপ নেপোলিয়ন – (লিজিয়ন অফ অনার / নোবেল / পদ্মশ্রী) উপাধি প্রদানের প্রথা চালু করেন।
- ক্যাম্পোফর্মিওর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় নেপোলিয়নের সঙ্গে – (অস্ট্রিয়ার/রাশিয়ার/ইংল্যান্ডের)।
- ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে অ্যামিয়েন্সের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ফ্রান্সের সঙ্গে – (ইংল্যান্ডের / রাশিয়ার / অস্ট্রিয়ার)।
- ট্রাফালগারের যুদ্ধে ইংরেজ পক্ষের সেনাপতি ছিলেন – (নেলসন/আলেকজান্ডার/প্রথম চার্লস)।
- ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়েছিল ফ্রান্সের সঙ্গে – (ইংল্যান্ডের / স্পেনের / পোর্তুগালের)।
- প্রেসবার্গের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ফ্রান্সের সঙ্গে – (রাশিয়ার / অস্ট্রিয়ার / প্রাশিয়ার)।
- ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে ফ্রান্স – (রাশিয়াকে / ইংল্যান্ডকে / স্পেনকে) পরাস্ত করে।
- টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় নেপোলিয়নের সঙ্গে – (জার প্রথম আলেকজান্ডারের / দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের / অষ্টাদশ লুইয়ের)।
- টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় – (১৮০০/১৮০৭/১৮১৮) খ্রিস্টাব্দে।
- ‘সমুদ্রের রানি’ বলা হয় – (রাশিয়াকে / ইংল্যান্ডকে / জার্মানিকে)।
- নেপোলিয়ন ‘দোকানদারের জাত’ বলতেন – (ফরাসিদের / জার্মানদের / ইংরেজদের)।
- নেপোলিয়ন ‘বার্লিন ডিক্রি’ জারি করেন – (১৮০১/১৮০৪/১৮০৬) খ্রিস্টাব্দে।
- বার্লিন ডিক্রির প্রত্যুত্তরে ইংল্যান্ড জারি করে – (অর্ডার-ইন-কাউন্সিল / মিলান ডিক্রি / ওয়ারশ ডিক্রি)।
- স্পেন ও পোর্তুগাল – (আইবেরীয় / আরব / আফ্রিকান) উপদ্বীপ নামে পরিচিত।
- পোর্তুগাল ও স্পেনে নেপোলিয়ন বিরোধী যুদ্ধ – (উপদ্বীপের / মরুদেশীয় / ভূমধ্যসাগরীয়) যুদ্ধ নামে পরিচিত।
- নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে – (মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা / পেনিনসুলার যুদ্ধ / পোড়ামাটি নীতি) গ্রহণ করেন।
- নেপোলিয়ন – (১৮০০/১৮১২/১৮১৮) খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করেন।
- নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে রাশিয়া – (পোড়ামাটির নীতি / রক্ত ও লৌহ নীতি / মহাদেশীয় অবরোধ) গ্রহণ করেন।
- বোরোডিনোর যুদ্ধ হয়েছিল নেপোলিয়নের বাহিনীর সঙ্গে – (ব্রিটিশ/জার্মান/রুশ) সেনাবাহিনীর।
- চতুর্থ শক্তিজোটের কাছে পরাজিত হয়ে নেপোলিয়ন নির্বাসিত হয়েছিলেন – (এলবা দ্বীপে / রেঙ্গুনে / সেন্ট হেলেনা দ্বীপে)।
- নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছিলেন – (১৭৯৯ / ১৮০৪ / ১৮১৪) খ্রিস্টাব্দে।
- নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপ থেকে পুনরায় ফ্রান্সে আসেন – (১৮১৪/১৮১৫/১৮২১) খ্রিস্টাব্দে।
- নেপোলিয়ন ফ্রান্সে আবার ‘একশ দিন রাজত্ব’ করেছিলেন – (১৮১৪/১৮১৫/১৮১৬) খ্রিস্টাব্দে।
এস.এ.কিউ.
প্রশ্নমান–২
প্রশ্ন–২। কনসুলেটের শাসন বলতে কী বোঝো?
- নেপোলিয়ন ১৭৯৯ খ্রি. ফ্রান্সে ডিরেকটরি শাসনের অবসান ঘটিয়ে কনস্যুলেটের শাসনের সূচনা ঘটান।
- এই শাসনব্যবস্থায় তিনজন কনসালের হাতে শাসন ক্ষমতা অর্পিত হয়। তিনজন কনসাল ছিলেন – নেপোলিয়ন, আবে সিয়েস ও রজার ডুকোস। যদিও নেপোলিয়নের হাতে সর্বাধিক ক্ষমতা ছিল।
প্রশ্ন–২। নেপোলিয়ন কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৭৬৯ খ্রি. ১৫ আগস্ট কর্সিকা দ্বীপের অ্যাজাক্কিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
- কর্সিকা দ্বীপ ইতালির অধীনে থাকলেও নেপোলিয়নের জন্মের আগে ফ্রান্স কর্সিকা দখল করে নেয়।।
প্রশ্ন–৩। ‘নেপোলিয়নের যুগ’ বলতে কী বোঝায়?
- নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ১৭৯৯ খ্রি. কনস্যুলেটের শাসন প্রবর্তন করেন এবং তিনি প্রথম কনসাল হয়ে অধিক ক্ষমতা লাভ করেন।
- ১৭৯৯ খ্রি. থেকে ১৮১৪/১৫ খ্রি. পর্যন্ত নেপোলিয়ন ফ্রান্স শাসন করেন এবং সমগ্র ইউরোপে প্রভাব বিস্তার করেন। তাই এই সময়কালকে ‘নেপোলিয়নের যুগ’ বলে অভিহিত করা হয়।
প্রশ্ন–৪। নীলনদের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল?
- নীলনদের যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৯৮ সালে।
- এই যুদ্ধ ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন–৫। কোড নেপোলিয়ন কী?
- সাম্য আদর্শের উপর ভিত্তি করে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে যে আইনবিধি প্রবর্তন করেন, তা ‘কোড নেপোলিয়ন’ নামে পরিচিত।
- ২২৮৭টি ধারা সম্বলিত এই আইনবিধিকে লেফেভর ‘ফরাসি সমাজের বাইবেল’ নামে অভিহিত করেন। এই আইনবিধি প্রবর্তনের জন্য নেপোলিয়ন ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ নামে পরিচিত হন।
প্রশ্ন–৬। লিজিয়ন অব অনার কী?
- লিজিয়ন অব অনার হল ফ্রান্সের একটি সম্মানজনক পুরস্কার।
- নেপোলিয়ন 1802 সালে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ও সেবার পুরস্কার স্বরূপ এই পুরস্কার প্রদানের প্রথা চালু করেছিলেন।
প্রশ্ন–৭। কে, কবে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটান?
- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান ১৮০৬ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটান।
প্রশ্ন–৮। ব্যাংক অব ফ্রান্স কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
- নেপোলিয়ন কর্তৃক ১৮০০ সালে ‘ব্যাংক অব ফ্রান্স’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন–৯। নেপোলিয়নকে ইতালির মুক্তিদাতা কেন বলা হয়?
- ইতালির উত্তরাংশ ছিল অস্ট্রিয়ার দখলে। নেপোলিয়ন অস্টারলিজের যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে ইতালিকে অস্ট্রিয়ার শাসন থেকে মুক্ত করেন। এজন্য ইতালিবাসী তাঁকে ‘মুক্তিদাতা’ বলে ঘোষণা করেন।
প্রশ্ন–১০। ‘ফরাসি জাতির সম্রাট’ উপাধি কে, কবে গ্রহণ করেন?
- ১৮০৪ সালের ২ ডিসেম্বর নেপোলিয়ন নিজেকে ‘ফরাসি জাতির সম্রাট’ বলে ঘোষণা করেন।
- পোপ সপ্তম পায়াস তাঁকে সম্রাট পদে অভিষিক্ত করেন।
প্রশ্ন–১১। নেপোলিয়নের গৃহীত দুটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের নাম লেখ।
- পোপ সপ্তম পায়াসের সঙ্গে ধর্মমীমাংসা চুক্তি (১৮০১) সম্পাদন করে ধর্মসংস্কার করেন।
- এবং ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রবর্তন করে আইনসংস্কার করেন।
প্রশ্ন–১২। কনকর্ডাট বলতে কী বোঝো?
- ১৭৯১ খ্রি. ‘সিভিল কনস্টিটিউশন অফ দ্য ক্লর্জি’ প্রবর্তন করে পোপের ক্ষমতা লোপ করা হয়েছিল। কিন্তু নেপোলিয়ন পোপের ক্ষমতার পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে ১৮০১ সালে যে মীমাংসা সূত্র রচনা করেন, তা কনকর্ডাট নামে পরিচিত।
প্রশ্ন–১৩। কনফেডারেশন অব দি রাইন্ কী?
- নেপোলিয়ন জার্মানির অনেকগুলি রাজ্য নিয়ে ‘রাইনের রাষ্ট্রজোট’ বা ‘কনফেডারেশন অব দি রাইন’ গঠন করেন।
- প্রথমে ১৬টি এবং পরে ১৮টি জার্মান রাজ্য নিয়ে এই জোট গঠিত হয়েছিল। এই রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তার দায়িত্বে নেপোলিয়ন ছিলেন।
প্রশ্ন–১৪। বার্লিন ডিক্রি কী?
- বার্লিন ডিক্রি ছিল ‘মহাদেশীয় অবরোধ’ ব্যবস্থার প্রথম পদক্ষেপ।
- নেপোলিয়ন ১৮০৬ খ্রি. ‘বার্লিন ডিক্রি’ জারি করে ঘোষণা করেন যে – ফ্রান্স বা তার মিত্রদেশের বন্দরগুলিতে ইংল্যান্ডের কোনো জাহাজ ঢুকতে পারবে না। এই নির্দেশ অমান্য হলে ইংল্যন্ডের জাহাজ বাজেয়াপ্ত হবে।
প্রশ্ন–১৫। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?
- ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা’ বা ‘কন্টিনেন্টাল সিস্টেম’ হল নেপোলিয়ন প্রবর্তিত একটি নিষেধাজ্ঞামূলক নির্দেশনামা।
- ইংল্যান্ডকে জব্দ করতে নেপোলিয়ন ১৮০৬ সালে বার্লিন ডিক্রি জারি করে ইংল্যান্ডের জাহাজ বন্দরে নোঙর করার ব্যাপারে বা পণ্য বাণিজ্যের ব্যাপারে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই ব্যবস্থা মহাদেশীয় ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
প্রশ্ন–১৬। স্পেনীয় ক্ষত কী?
- স্পেনের অভ্যন্তরীণ বিবাদের সুযোগ নিয়ে নেপোলিয়ন স্পেনের সিংহাসনে ভ্রাতা জোসেফকে বসালে স্পেনে নেপোলিয়ন বিরোধিতা বিশেষ মাত্রা পায়।
- স্পেন ক্ষুব্ধ হয়ে একযোগে ইংল্যান্ড ও পোর্তুগালের সঙ্গে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এরপর ‘উপদ্বীপের’ যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে। এই ব্যর্থতা ‘স্পেনীয় ক্ষত’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন–১৭। অর্ডার ইন কাউন্সিল কী?
- ১৮০৭ খ্রি. ইংল্যান্ড কর্তৃক গৃহীত একটি নির্দেশনামা হল ‘অর্ডার-ইন-কাউন্সিল’।
- নেপোলিয়নের ‘বার্লিন ডিক্রি’র প্রত্যুত্তরে ইংল্যান্ড অর্ডার ইন কাউন্সিল জারি করেন। এতে বলা হয় – ফ্রান্স ও তার মিত্রদেশের বন্দরে কোনো জাহাজ প্রবেশ করলে ইংল্যান্ড তা বাজেয়াপ্ত করবে। নতুবা অনুমতি নিয়ে জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে।
প্রশ্ন–১৮। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থাকে বুমেরাং বা দ্বিমুখী অস্ত্র বলা হয় কেন?
- ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্যকে বিপর্যস্ত করতে নেপোলিয়ন ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা’ চালু করেছিলেন। কিন্তু এই ব্যবস্থা ইংল্যান্ডের পরিবর্তে বুমেরাং হয়ে ফ্রান্সেরই বেশি ক্ষতি করেছিল। তাই এই ব্যবস্থাকে ‘দ্বিমুখী অস্ত্র’ বলা হয়।
প্রশ্ন–১৯। উপদ্বীপের যুদ্ধ বা পেনিনসুলারের যুদ্ধ বলতে কী বোঝো?
- নেপোলিয়ন আইবেরীয় উপদ্বীপ অর্থাৎ পোর্তুগাল ও স্পেন দখল করতে সচেষ্ট হলে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ স্পেন ও পোর্তুগাল নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করে, তা উপদ্বীপের যুদ্ধ বা পেনিনসুলার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন–২০। পোড়ামাটি নীতি কী?
- নেপোলিয়ন ১৮১২ সালে রাশিয়া আক্রমণ করলে তখন রাশিয়া যে যুদ্ধনীতি গ্রহণ করেছিল, তা হল পোড়ামাটি নীতি।
- ফ্রান্সের গ্রান্ড আর্মি রাশিয়া আক্রমণ করলে রাশিয়ার সেনারা যুদ্ধ না করে পিছিয়ে যায় এবং ওই এলাকার গ্রাম ও শহর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়, বাসস্থান-খাদ্য নষ্ট করে দেয়। একে ‘পোড়ামাটি’ নীতি বলে।
প্রশ্ন–২১। নেপোলিয়নকে কবে, কোথায় নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল?
- প্রথমে ১৮১৪ খ্রি. ফন্টেনব্ল্যু-র সন্ধি অনুসারে পরাজিত নেপোলিয়নকে এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়।
- পরে ১৮১৫ সালে ওয়াটারলু-র যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর তাঁকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন–২২। শতদিবসের রাজত্ব বলতে কী বোঝায়?
- নির্বাসিত নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপ থেকে পালিয়ে এসে নামমাত্র সেনাদের সাহায্যে ফ্রান্সের সিংহাসন পুনরায় দখল করেন এবং ১০০ দিনের রাজত্ব করেন, যা ইতিহাসে ‘শত দিবসের রাজত্ব’ নামে পরিচিত।
- ১৮১৫ খ্রি. ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত এই রাজত্ব স্থায়ী হয়েছিল।
প্রশ্ন–২৩। ওয়াটার্লুর যুদ্ধের গুরুত্ব কী?
- ১৮১৫ খ্রি. নেপোলিয়ন ও ইউরোপের চতুর্থ শক্তিজোটের মধ্যে ওয়াটারলুর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
- এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে এবং তাঁকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। ফলে পুনরায় ফ্রান্সসহ ইউরোপে রাজতন্ত্রের পুনরুত্থান ঘটে।
প্রশ্ন–২৪। কাকে, কেন ‘ইউরোপের ককপিট’ বলা হয়?
- কৌশলগত অবস্থানের কারণে ইউরোপে বেলজিয়াম গুরুত্বপুর্ণ হয়ে ওঠে। এখানকার মাটিতে প্রচুর সেনাবাহিনী লড়াই করার কারণে এটিকে ‘ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্র’ বা ‘ইউরোপের ককপিট’-ও বলা হয়।
- প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নেপোলিয়নের শেষ যুদ্ধ এখানকার ওয়াটারলু-তেই হয়েছিল।
প্রশ্ন–২৫। কাকে মুকুটধারী জ্যাকোবিন বলা হয়?
- নেপোলিয়ান বোনাপার্টকে মুকুটধারী জ্যাকোবিন বলা হয়।
- ফ্রান্সের সন্ত্রাসের রাজত্বে যেভাবে জ্যাকোবিনরা স্বাধীনতার আদর্শকে হরণ করেছিল, নেপোলিয়নও সেভাবে ফ্রান্সের মুকুট পরে স্বাধীনতার আদর্শ হরণ করেন। তাই তাঁকে ‘মুকুটধারী জ্যাকোবিন’ বলা হয়।
প্রশ্ন–২৬। লিপিজিগের যুদ্ধের গুরুত্ব কী?
- ১৮১৩ সালে নেপোলিয়ন ও ইউরোপের চতুর্থ শক্তিজোটের মধ্যে লিপিজিগের যুদ্ধ ব জাতিসমূহের যুদ্ধ হয়।
- এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে নেপোলিয়নের বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে।
প্রশ্ন–২৭। ট্রাফালগারের যুদ্ধের গুরুত্ব কী?
- ১৮০৫ খ্রি. ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়।
- ট্রাফালগারের যুদ্ধে নেপোলিয়ন নৌসেনাপতি নেলসনের কাছে পরাজিত হন। এতে ইংল্যান্ডের নৌশক্তি অপ্রতিরোধ্যতা প্রমাণিত হয়। এবং নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে জব্দ করতে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা প্রবর্তনে সচেষ্ট হন।
প্রশ্ন–২৮। নেপোলিয়নকে ফরাসি বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ সন্তান কেন বলা হয়?
- নেপোলিয়ন সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও, একজন সাধারণ সেনা থেকে যথাক্রমে কনসাল ও ফরাসি জাতির সম্রাট হয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের ‘সাম্যের’ আদর্শ তিনি সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশে পুরাতনতন্ত্রের ধ্বংসসাধন করে ফরাসি বিপ্লবের ভাবধারার প্রচার ও প্রসার ঘটান। তাই নেপোলিয়নকে ‘ফরাসি বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ সন্তান’ বলা হয়।
প্রশ্ন–২৯। নেপোলিয়নকে কেন বিপ্লবের ধ্বংসকারী বলা হয় কেন?
- প্রজাতান্ত্রিক ফ্রান্সে নেপোলিয়ন কনসুলেটের শাসন চালু করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ফ্রান্সের সম্রাট হয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে ফ্রান্সে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাই তাঁকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ বলা হয়।
প্রশ্ন–৩০। নেপোলিয়ন ইউরোপের কোন কোন রাষ্ট্র দখল করেন?
- নেপোলিয়ন পোর্তুগাল, স্পেন, ইতালি, জার্মানি, হল্যান্ড ফ্রান্স সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন।
প্রশ্ন–৩১। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে কোন কোন স্থানে জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল?
- নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ইউরোপের কয়েকটি দেশে জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গিয়েছিল, যথা – পোর্তুগাল, স্পেন, জার্মানি, রাশিয়া প্রভৃতি।
প্রশ্ন–৩২। কোড নেপোলিয়নের দুটি নীতি লেখ।
- সাম্যের আদর্শের উপর ভিত্তি করে রচিত কোড নেপোলিয়নের উল্লেখযোগ্য দুটি নীতি হল : ক] আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। খ] ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া।
প্রশ্নমান–৪
(১) নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ কেন করেন? এর ফল কী হয়?
(২) নেপোলিয়নের ক্ষমতা লাভের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
(৩) কোড নেপোলিয়ন বলতে কী বোঝো? / টীকা লেখ – কোড নেপোলিয়ন
(৪) স্পেনীয় ক্ষত কী?
(৫) মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে টীকা লেখ।
(৬) নেপোলিয়নের কার্যকলাপের সঙ্গে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শের বিরোধ সংক্ষেপে লেখ।
(৭) পোড়ামাটি নীতি কী?
(৮) নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদী আদর্শ কী ছিল?
(৯) নেপোলিয়নের রুশ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার কারণ লেখ।
(১০) নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারগুলি লেখ।
(১১) নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কতখানি দায়ী?
(১২) নেপোলিয়নকে বিপ্লবের সন্তান বলা হয় কেন?
(১৩) নেপোলিয়নকে বিপ্লবের ধ্বংসকারী বলা হয় কেন?
(১৪) আইবেরীয় উপদ্বীপে নেপোলিয়ন বিরোধী প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
(১৫) শত দিবসের রাজত্ব বলতে কী বোঝো?
(১৬) নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
(১৭) নেপোলিয়নের পতনের কারণ কী ছিল?
(১৮) ফ্রান্সে কলসুলেটের শাসনের পরিচয় দাও।
(১৯) ইউরোপের পুনর্গঠনে নেপোলিয়নের ভূমিকা কী ছিল?
প্রশ্নমান–৮
(১) মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো? নেপোলিয়নের পতনে এই ব্যবস্থার ভূমিকা কী ছিল?
(২) কোড নেপোলয়নের উদ্দেশ্য কী কী? এই কোডের ধারাগুলি আলোচনা কর।
(৩) নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানের কারণ লেখ।
(৪) নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান সম্পর্কে লেখ।
(৫) কোড নেপোলিয়নের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটিগুলি আলোচনা কর।
(৬) নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থান ও ক্ষমতা লাভ আলোচনা কর।
(৭) ডাইরেকটরি শাসনকালে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সংকট সম্বন্ধে আলোচনা কর।
(৮) নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বিভিন্ন সংস্কারগুলির উল্লেখ করো।