বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন উত্তর : প্রিয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) সন্নিবেশিত হলো।
তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে ১, ২, ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।
বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন উত্তর, নবম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়, Class 9 History
বিংশ শতকের ইউরোপ প্রশ্ন উত্তর : 2 Marks
১. রাশিয়ায় ‘ জারতন্ত্র’ বলতে কী বোঝায় ?
- ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার মিখাইল রোমানভের প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ রোমানভ রাজবংশ নামে পরিচিত । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় যার তন্ত্রের পতন ঘটে। এই বংশের রাজা রাজার ‘জার ‘ উপাধিতে ভূষিত হতো বলে এই বংশের শাসনকাল ‘জারতন্ত্র ‘নামে পরিচিত ।
২. ডিসেমব্রিস্ট /ডেকাব্রিস্ট বিদ্রোহ (১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দ) কী ?
- প্রথম নিকোলাসের শাসনকালে বেশ কিছু দেশ প্রেমিক ও একদল সেনা ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে ২৬ ডিসেম্বর রাশিয়ার পেট্রোগ্রাড শহরে নিকোলাসের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করে, তা ডিসেমব্রিস্ট বা ডেকাব্রিস্ট বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
- দাবি :`বিদ্রোহীদের দাবি ছিল – ১. জারের স্বৈরশাসন রদ করা, ২. সংবিধানিক ও উদারতান্ত্রিক শাসন চালু করা এবং ৩. ভূমি দাস প্রথা উচ্ছেদ করা।
- ব্যর্থতা :` এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল বলে জানা যায় । জারের প্রচন্ড দমনপিরনের ফলে ।
৩. ‘মুক্তিদাতা জার’ কাকে, কেন বলা হয় ?
- দ্বিতীয় আলেকজান্ডার কে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয় । এর কারণগুলি আলোচনা করা হলো— ১. ভূমিদাসরা স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা লাভ করে। ২. ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটায়। ৩. ভূমিদাসদের মুক্তি প্রদান হয় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে। ৪. ভূমি দাসদের বেচাকেনা ও আরো অন্যান্য বিষয় বন্ধ হয়ে যায় বলে লক্ষ্য করা যায় ।
৪. ‘মির’ কী ?
- দেখা যায় রাশিয়ার গ্রামীণ সমবায় সমিতি ছিল যা ‘মির ‘ নামে পরিচিত ছিল । জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটান। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে এই প্রথার অবসান ঘটেছিল । এবং পরবর্তীকালে ‘মির’ নামক সমবায় সমিতির ওপর মুক্ত কৃষকদের ওপর ভূমির সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করেছিল । জানা যায়’ মির ‘ কর্তৃক মুক্ত ভুমিদাসরা শোষিত ও অত্যাচারিত হতো ।
৫. ‘নারদনিক আন্দোলন’ কী
- রুশ জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের শাসনকালে গড়ে ওঠা জনগণের আন্দোলনকে বোঝায় নারদনিক আন্দোলন । এই আন্দোলন প্রথমত রাশিয়ার কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য বুদ্ধিজীবী ছাত্র ও যুবকদের দ্বারা ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল । এবং দ্বিতীয় কারণটি হল, এই আন্দোলনের একটি পর্বে রুশ জারকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হলে সরকারের দমননীতির কারণে এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল।
৬. ‘বুলিঘিন শাসনতন্ত্র ‘ কি ?
- কৃষকদের মনে আশার সঞ্চার করা এবং বুর্জোয়াদের ভোটাধিকার দানের উদ্দেশ্য একটি শাসনতন্ত্র চালু করা হয় যা বুলিঘিন শাসনতন্ত্র নামে পরিচিত। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের মন্ত্রী বুলিঘিনের উদ্যোগে বিপ্লবীদের দুর্বল করা করা এর প্রধান উদ্দেশ্য । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে এই শাসনতন্ত্র প্রবর্তিত হয় ।
৭. ডুমা কী?
- ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম রুশ বিপ্লবে ভয় পেয়ে জার দ্বিতীয় নিকোলাস নির্বাচনের মাধ্যমে আইন পরিষদ বা ডুমা গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। রাশিয়ার জাতীয় পরিষদ ‘ডুমা’ (DUMA) নামে পরিচিত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ডুমার অধিবেশন বসেছিলো।
৮. স্টোলিপিন কেন বিখ্যাত ছিলেন?
- স্টোলিপিন ছিলেন জার নিকোলাসের সুযোগ্য ও দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী।
- তিনি রাশিয়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে স্বৈরাচারী ও জনবিরোধী রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন । সম্ভবত তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে জার দ্বিতীয় নিকোলাস গুপ্তঘাতকের দ্বারা তাকে হত্যা করেন।
৯. ‘পেট্টাগ্রাড ধর্মঘট’ কি?
- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ জার দ্বিতীয় নিকলাসের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় পেট্রোগ্রাড শহরে বলশেভিকদের শ্রমিকরা যে ধর্মঘট করেছিল তা ‘পেট্রোগ্রাড ধর্মঘট’ নামে পরিচিত। এই ধর্মঘটে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার শ্রমিক যোগদান করেছিলেন। শ্রমিক ও কৃষকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং খাদ্যের দাবিতে এই ধর্মঘট হয়েছিল।
১০. ইসক্রা বলতে কী বোঝায় ?
- এটি একটি রুশ পত্রিকা, ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি প্রকাশিত হয়েছিল লেলিনের দ্বারা। নির্বাসন কালে থাকাকালীন লেনিন এই পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন বলে জানা যায়। ‘ইস্ক্রা’-এর অর্থ হলো স্ফুলিঙ্গ । এই পত্রিকার মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে রাশিয়ায় বলশেভিক দল গড়ে ওঠে।
১১. রুশ বিপ্লবকে প্রভাবিত করেছিল এমন কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম উল্লেখ কর।
- রুশ বিপ্লবে সাহায্যকারী উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকরা হলেন – লিও টলস্টয়, পুশকিন, তুর্গেনিভ প্রমুখরা । এছাড়া কাল মার্কস-এর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ এবং বাকুনিনের নৈরাজ্যবাদী চিন্তাও রুশ বিপ্লবকে প্রভাবিত করেছিল।
১২. মার্চ বিপ্লব কাকে বলে ?
- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রমিক ধর্মঘট, সরকারি অস্ত্রাগার লুঠ ও বিচারালয়গুলিতে আগুন ধরানো প্রভৃতি ঘটনার মাধ্যমে বিপ্লবীরা রাজধানী পেট্রোগ্রাড শহর দখল করে নেয়। এর ফলে রুশ জার দ্বিতীয় নিকোলাস বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন এবং রাশিয়ার বুর্জোয়া নেতা প্রিন্স জর্জ লুভভ-এর নেতৃত্বে একটি স্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। আবার এইভাবে রাশিয়াতে রোমানভ বংশের পতন ঘটে বলে ঘটনাটি ‘মার্চ বিপ্লব’ নামে পরিচিত।
১৩. কেরেনস্কি কে ছিলেন ?
- কেরেনস্কি ছিলেন রাশিয়ার মেনশেভিক দলের নেতা। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চে জারতন্ত্রের অবসান ঘটলে যে অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তবে ওই বছরের নভেম্বর মাসে বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করলে তিনি আমেরিকায় পালিয়ে যান।
১৪. এপ্রিল থিসিস কি ?
- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই এপ্রিল লেনিন তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা এবং যে বিখ্যাত কর্মধারা প্রকাশ করেন তা ‘এপ্রিল থিসিস’ নামে পরিচিত। লেনিন এতে বলেন— ১. বলশেভিকরাই জারতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিলেন এবং শাসনক্ষমতা তাদেরই প্রাপ্য। ২. কৃষক, শ্রমিকশ্রেণী সহ সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৫. ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর বিপ্লব বা রুশ বিপ্লবের গুরুত্ব কি ছিল?
- ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে রাশিয়া যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল তা নভেম্বর বিপ্লব বা রুশ বিপ্লব নামে পরিচিত । এই বিপ্লবের বিভিন্ন কারণ লক্ষ করা যায় সেগুলি হল—১. রাশিয়ার রোমানভ বংশের পতন ঘটিয়ে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ২. পুনরায় রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত অ-রুশ জাতিগুলি সমমর্যাদা ও সমান অধিকার লাভ করে এবং ৩. রাশিয়াতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটে।
১৬. রুশ বিপ্লবের সামাজিক প্রভাব কি ছিল?
- রুশ বিপ্লবের বেশ কয়েকটি সামাজিক প্রভাব ছিল । সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো—১. রাশিয়াতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক কৃষকশ্রেণীর সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো। ২. রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত অ-রুশ জাতিগুলি সমমর্যাদা ও সমান অধিকার লাভ করে এবং অপরদিকে ৩. বিভিন্ন দেশের সাম্যবাদী ও শ্রমিক আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৭. রুশ বিপ্লবের আপাত ফলাফল কি হয়েছিল?
- রুশ বিপ্লবের আপাত ফলাফলগুলি আলোচনা করা হলো—১. রাশিয়ায় কেরেনস্কি সরকারের পতন ঘটে এবং লেনিনের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। ২. ভূস্বামী ও যাজকদের কাছ থেকে জমি বাজেয়াপ্ত করে তা কৃষকদের মধ্য বন্টন করা হয় এবং ৩. রাশিয়ায় প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শে বিশ্বাসী জমিদার, যাজক, বিত্তশালী শ্রেণী রুশীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
১৮. রাশিয়ার ইতিহাসে ১৯১৭ এর গুরুত্ব কি ?
- লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এই বিপ্লব রাশিয়ায় সংঘটিত হয়। এর দ্বারা রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং রাশিয়া বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯. ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের কারণগুলি কি ছিল ?
- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লব-এর সাফল্যের বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো—১. বলশেভিক দলের নেতা লেনিনের সুযোগ্য নেতৃত্ব। ২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার ধারাবাহিক বিপর্যয়। ৩. কেরেনস্কি ব্যবস্থার দুর্বলতা জনসমক্ষে প্রকট হয়ে ওঠা এবং ৪. তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
২০. কবে, কোন প্রত্যক্ষ কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়? অথবা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল?
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে। অস্ট্রিয়া এবং সার্বিয়ার যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের কারণ ছিল— অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ও তার পত্নী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে বেড়াতে এলে ব্ল্যাক হ্যান্ড দলের সদস্য এক স্লাভ আততায়ীর হাতে নিহত হন। এই ঘটনা ‘সেরাজোভো হত্যাকান্ড’ নামে পরিচিত
২১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আগে ইউরোপে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। এই শক্তিজোটগুলি হলো—১. এক পক্ষে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, জাপান ইত্যাদি পোর্তুগাল যা মিত্রশক্তি নামে পরিচিত ছিল। ২. অপরপক্ষে অস্ট্রিয়া, ইতালি, তুরস্ক বুলগেরিয়া যা ‘অক্ষশক্তি’ নামে পরিচিত। যদিও ইতালি অক্ষশক্তি ত্যাগ করে মিত্রশক্তিতে যোগদান।
২২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয় ?
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে সর্বাত্মক যুদ্ধ বলা হয়। এর কারণগুলি হলো—১. চার বছর স্থায়ী এই যুদ্ধ সামরিক বাহিনীর সেনারা পাশাপাশি অসামরিক এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। ২. ইউরোপ ছাড়িয়ে এই যুদ্ধ জলে, স্থলে ও আকাশে বিস্তার লাভ করে সর্বব্যাপী যুদ্ধে পরিণত হয়েছিলো। ৩. এই যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক এবং ব্যয়বহুল।
২৩. প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে গৃহীত সন্ধিগুলির নাম উল্লেখ কর ?
- ১৯১৯ সালে প্যারিসে শান্তি সম্মেলন গৃহীত হয়েছিল। গৃহীত সন্ধিগুলি ছিল—১. জার্মানির সঙ্গে ভার্সাই এর সন্ধি ২. অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সেন্ট জার্মেইনের সন্ধি। ৩. বুলগেরিয়ার সঙ্গে নিউলির সন্ধি। ৪. হাঙ্গোরির সঙ্গে ট্রিয়ান এর সন্ধি। ৫. তুরস্কের সঙ্গে সেভরের সন্ধি।
২৪. প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে কারা পরিচিত হয়েছিল?
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে। প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে বিজয়ী মিত্রশক্তির প্রতিনিধিরা যোগ দিলেও সর্বোচ্চ ক্ষমতা ছিল মোট চারটি দেশের হাতে। তারা হল— উড্রো উইলসন (মার্কিন রাষ্ট্রপতি), লয়েড জর্জ (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী), ক্লিমেশো (ইতালির প্রধানমন্ত্রী) এবং অর্ল্যান্ডো (ফরাসি প্রধানমন্ত্রী) প্রমুখ। এঁরাই বৃহৎ চতুঃশক্তি বা Big Four নামে পরিচিত ছিল।
২৫. ভার্সাই সন্ধির দুটি সামরিক শর্ত লেখ ?
- বেশ কয়েকটি শর্ত ছিল ভার্সাই সন্ধির। এই সন্ধির উদ্দেশ্য ছিল জার্মানিকে সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্ত দিক থেকে দুর্বল করে দেওয়া। জার্মানির সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য এই সন্ধিতে বলা হয়—১. জার্মানির সেনাবাহিনী ভেঙ্গে সৈন্য সংখ্যা ১ লক্ষ করে দেওয়া হয় এবং ২. জার্মানির যুদ্ধজাহাজগুলি ব্রিটেনকে দিয়ে দেওয়া হয়।
২৬. ভার্সাই সন্ধিকে ‘আরোপিত সন্ধি’ বা ‘জবরদস্তি মূলক সন্ধি’ বলা হয় কেন ?
- ভার্সাই সন্ধিকে ‘আরোপিত সন্ধি’ বা ‘জবরদস্তিমূলক সন্ধি’ বলা হয়। এর কারণগুলি হলো, ১. যুদ্ধে বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির উপর জোর করে ভার্সাই-এর সন্ধি চাপিয়ে দেয়, যাতে পুনরায় জার্মানি শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে। ২. এই সন্ধি ছিল জার্মানির কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। জার্মান প্রতিনিধিদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে জোর করে এই চুক্তিতে তাদের স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
২৭. ভার্সাই চুক্তির স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
- ভার্সাই চুক্তির স্বপক্ষে বেশ কয়েকটি যুক্তি ছিল—১. পৃথিবীর কূটনীতির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিজয়ী পক্ষ সবসময় পরাজিত পক্ষের উপর একতরফা চুক্তি চাপিয়ে দেয়। তাই ভার্সাই চুক্তির ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকরী হয়েছে। ২. যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে মানুষের মনে জার্মানি সম্পর্কে যে ঘৃণার সঞ্চার হয়েছিল সন্ধি-রচয়িতারা তা উপেক্ষা করতে পারেননি।
২৮. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি ফলাফল লেখ।
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফলগুলি ছিল—১. প্রচুর সংখ্যক সেনা ও মানুষ মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়। ২. বিশ্বের প্রতিটি দেশ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল, ৩. অনেক কলকারখানা, শহর, গ্রাম, বন্দর ধ্বংস হয়ে যায়। ৪. জনগনের আর্থিক দুর্দশা ও বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। ৫. ইউরোপের বেশ কয়েকটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।
২৯. কেন ‘চোদ্দদফা নীতি’ ঘোষিত হয়?
- উড্রো উইলসন প্রথম চোদ্দদফা ঘোষণা করেন। উড্রো উইলসন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি চোদ্দদফা নীতিটি ঘোষিত হয়েছিল। এই চোদ্দদফা নীতিগুলির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—১. বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ২. গণতন্ত্র রক্ষা করা ৩. ন্যায় ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে আইনসম্মত শাসন স্থাপন করা এবং ৪. একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
৩০. জাতিসংঘ কখন গঠিত হয়?
- উড্রো উইলসন তাঁর চোদ্দদফা নীতিতে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয় ও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় । তবে জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন হয় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি।
৩১. জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারা ছিল?
- জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার সময় এই পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ছিল—১. ইংল্যান্ড, ২.ফ্রান্স, ৩. ইতালি, ৪. জাপান। অবশেষে পরবর্তীকালে ৫. রাশিয়া এবং ৬. জার্মানি স্থায়ী সদস্য পদ গ্রহণ করে।
৩২. জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল ?
- জাতিসংঘ ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মহৎ আদর্শ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করা হলো—১. জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী ছিল না। ২. জাতিসংঘের সংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতা না থাকা, ৩. বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা ৪. জার্মানি ও ইতালির প্রতি ইংল্যান্ড ফ্রান্সের তোষণ নীতি এবং ৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা।
৩৩. ভাইমার প্রজাতন্ত্র কী?
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলে জার্মানির বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডরিক ইবার্ট এর নেতৃত্বে সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান দল একটি অস্থায়ী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। বার্লিনের কাছে ভাইমার নামক স্থানে এই অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকারের কর্মকেন্দ্র প্রতিষ্টিত হয় বলে এই প্রজাতন্ত্র ভাইমার প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত । এই প্রজাতন্ত্রটি টিকেছিল ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত । জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে এই প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে।
৩৪. গুস্তাভ স্ট্রেসেম্যান কে ছিলেন?
- গুস্তাভ ছিলেন ভাইমার প্রজাতন্ত্রের চ্যান্সেলার (১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত)। তাঁর কৃতিত্ব ছিল এইরূপ—১. জার্মানির ওপর যে ক্ষতিপূরণ চাপিয়ে দেওয়া হয় ভার্সাই সন্ধিতে সেই ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধানের জন্য তার প্রচেষ্টাতেই ডাওয়েজ পরিকল্পনা, ইয়ং কমিশন প্রভৃতি গঠিত হয়। ২. তাঁর সময়েই এই জার্মানি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ৩. ফ্রান্সের সঙ্গে জার্মানির বিরোধিতা হ্রাস পায়।
৩৫. অর্থনৈতিক মহামন্দা বলতে কি বোঝো?
- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি হুভারের শাসনকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রথমে শেয়ার বাজারে ধ্বস নামে ও পরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসে। এর ফলে ক্রয়-বিক্রয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে মন্দা দেখা দেয় তা অর্থনৈতিক মহামন্দা নামে পরিচিত। মহামন্দা চলেছিল প্রায় এক দশক।
৩৬. নিউ ডিল কি ?
- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাপী মহামন্দা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল । মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, কৃষি, ব্যাংক, বাণিজ্য, বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য কিছু কর্মসূচি নেন। এই নতুন আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি হল ‘নিউ ডিল’ বা নব বিন্যাস।
৩৭. ফ্যাসিবাদ কী?
- ফ্যাসিবাদ হল ইতালিতে মুসোলিনি নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার ও তার উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মতবাদ । মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে আগ্রাসী, জাতিবিদ্বেষী, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে যা ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত।
৩৮. ফ্যাসিস্ট দল কে, কেন প্রতিষ্ঠা করেন ?
- ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দল প্রতিষ্ঠা করেন বেনিতো মুসোলিনি। ফ্যাসিস্ট দলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—১. কমিউনিস্টদের ধ্বংস সাধন করা। ২. সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির হারানো মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ৩. রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করা।
৩৯. নাৎসিবাদ কী?
- হিটলারের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মতবাদ হলো নাৎসিবাদ। জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত নাৎসি দল ক্ষমতায় এলে জার্মানিতে এই মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই মতবাদ ফ্যাসিবাদের মতোই আগ্রাসী, জাতিবিদ্বেষী, একনায়কতন্ত্রী রাজনৈতিক মতাদর্শ। হিটলারের লেখা ‘মেইন ক্যাম্ফ’ হল নাৎসিবাদের বাইবেল।
৪০. নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ?
- নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়—১. নাৎসিবাদ ফ্যাসিবাদের তুলনায় বেশি ভয়ংকর ও উগ্র হলেও নাৎসিবাদ যতটাই ইহুদি বিদ্বেষী ছিল ফ্যাসিবাদ ততটা ছিল না। ২. ফ্যাসিবাদ ইতালির অর্থনীতিকে মজবুত করতে পারেনি এবং বেকার সমস্যার মতো বিভিন্ন সমস্যা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু নাৎসিবাদ জার্মানিতে এই সকল বিষয়ে সাফল্য অর্জন করতে সফল হয়েছিল।
৪১. গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের পার্থক্য লেখ?
গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়—১. গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক মতবাদ। ২. জনগণের মতের উপর প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা হল গণতন্ত্র। ৩. গণতন্ত্রে বিরোধীদল মর্যাদাপূর্ণ মত প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । এবং অপরদিকে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলের কোন ভূমিকা নেই বলে জানা যায়।
৪২. হিটলারের উৎখানের কারণ লেখ। অথবা, জার্মানিতে নাৎসি দলের জনপ্রিয়তার কারণ কি ছিল ?
- হিটলারের উত্থানের বিভিন্ন কারণ ছিল। জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ও নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা ছিল। এর কারণগুলি নিম্নে আলোচিত হলো—১. অপমানজনক ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে নাৎসি দলের প্রচার। ২. জার্মানির বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতা। ৩. জার্মানির আর্থ-সামাজিক সংকট, বেকারত্ব, খাদ্যাভাবের পরিপ্রেক্ষিতে নাৎসিদলের ইতিবাচক প্রচার। ৪. হিটলারের ব্যক্তিত্ব দ্বারা জার্মানবাসীর মনে আসার সঞ্চার।
- জার্মানিতে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে হিটলারের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হিটলারের ক্ষমতায় উত্থান সম্ভব হয়।
৪৩. হেরেনভক তত্ত্ব কী?
- হিটলার মনে করতেন, জার্মানরাই একমাত্র বিশুদ্ধ আর্যজাতির রক্তের অধিকারী ও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি। একারণেই জার্মান জাতি অন্যান্য জাতির উপর আধিপত্য স্থাপনের অধিকারী। তাঁর এই তও্বই ‘হেরেনভক তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।
৪৪. ‘মেইন ক্যাম্প’ গ্রন্থটি কার রচনা? এটি কেন বিখ্যাত?
- মেইন ক্যাম্ফ (১৯২৫) একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। এই গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন জার্মানির নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার। এই গ্রন্থে হিটলারের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও কর্মসূচির পরিচয় পাওয়া যায় বলে এই গ্রন্থটি ‘নাৎসিবাদের বাইবেল’ নামে পরিচিত।
৪৫. স্পেনের গৃহযুদ্ধ কী?
- ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের দুর্বল প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূচনা হয় তা ‘স্পেনের গৃহযুদ্ধ’ নামে খ্যাত। দীর্ঘদিন এই গৃহযুদ্ধ চলার পর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ইতালির সাহায্য পুষ্ট হয়ে জেনারেল ফ্রাঙ্কো স্পেনের প্রজাতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে সে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
৪৬. জেনারেল ফ্রাঙ্কো কে ছিলেন?
- জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো ছিলেন ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত স্পেনের গৃহযুদ্ধের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা। তিনি এই গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং স্পেনের রাষ্ট্রনায়ক বা ‘কডিলো’-তে পরিণত হন । তাঁর সময়ের স্পেনকে ‘ফ্রাঙ্কোবাদী স্পেন’ বলা হত।
৪৭. কাকে এবং কেনো ‘আধুনিক রাশিয়ার জনক’ বলা হয় ?
- পিটার দ্য গ্রেট কে ‘আধুনিক রাশিয়ার জনক’ বলা হয়। কারণ—১. ব্রেসিয়ার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করে জনগণের কৃতজ্ঞতাভজন হয়েছিলেন। ২. তিনি রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন সংস্কার করেছিলেন। ৩. বৈদেশিক ক্ষেত্রে ও কূটনীতিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
৪৮. রাসপুটিন কে ছিলেন ?
- রাসপুটিন রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের একজন ধর্মগুরু ছিলেন। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত তিনি রুশ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের স্ত্রী তথা রানী আলেকজান্দ্রিয়ার সমর্থন পেয়ে রাজদরবারে প্রভাব স্থাপন করে উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ও সেনাপতিদের অপদস্ত করতেন। তার চারিত্রিক শিথিলতা মানুষের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছিল।
৪৯. রুশীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো?
- ষোলো শতক থেকে রাশিয়া অন্য দেশে বিশেষত তাতার শাসন এলাকায় খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও রুশ ভাষা চাপিয়ে দিয়ে রুশীকরণ শুরু করেছিল। ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ও পোল্যান্ড বিদ্রোহের পর রাশিয়ার জাররা ইউরাল এলাকা, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড, বেসারাবিয়া বা মোলডাভা প্রভৃতি এলাকার অ-রুশদের ওপর রুশ ভাষা ও রুশ সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার নীতি নিয়েছিলেন। এই নীতিটিই ‘রুশীকরণ নীতি’ নামে পরিচিত।
৫০. ‘থার্ড সেকশন’ কী?
- রাশিয়ার গুপ্ত পুলিশবাহিনীকে বলা হত ‘থার্ড সেকশন’ । ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে জার প্রথম নিকোলাস এটি স্থাপন করেন। এই বাহিনীকে বিদ্রোহ ও বিপ্লব দমনে কাজে লাগানো হয় । অবশেষে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে এটিকে রদ করে রাশিয়াতে পুলিশবাহিনী গঠন করা হয়।
৫১. রক্তাক্ত রবিবার কী?
- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি রবিবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে একদল নিরস্ত্র শ্রমিক বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাসকে একটি স্মারকলিপি দিতে যায়। এই অভিযানে রুশ সেনারা গুলি চালালে শতাধিক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয় । রাশিয়ার ইতিহাসে এই ঘটনা ‘রক্তাক্ত রবিবার’ বা ‘১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব’ নামে পরিচিত।
৫২. কেন ১৯০৫ খ্রিস্টাবদের বিপ্লবকে ‘১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের’ মহড়া বলা হয়?
- ১৯০৫ খ্রি. রাশিয়ায় যে বিপ্লব হয়েছিল তাতে — ১. রাশিয়া আইসেন্ট পিটাসবার্গ সহ মস্কো, রিগা ইত্যাদি অঞ্চলে শ্রমিক ধর্মঘটের সূচনা হয় এবং ৪ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক এতে অংশ নেয়। ২. এই বিপ্লব জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও কৃষককে সচেতন করে তোলে এবং জারের ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার বিরুদ্ধে তারা প্রশ্ন তুলতে থাকে। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশবিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করে দেয় বলে অনেকে এই বিপ্লবকে ‘১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের মহড়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
৫৩. মিনশেভিক ও বলশেভিক কথার অর্থ কী?
- রাশিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির সংখ্যালঘিষ্ঠ সদস্যরা ‘মেনশেভিক’ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা ‘বলশেভিক’ নামে পরিচিত।
- ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে এই পার্টির সদস্যদের মধ্য ‘নীতি ও আদর্শকে’ কেন্দ্র করে মত বিরোধ দেখা দেয় ও পার্টি ভেঙে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। লেনিনের অনুগামী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় তারা বলশেভিক এবং মার্টভের অনুগামীরা মেনশেভিক নামে পরিচিত হয় । অবশেষে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই গোষ্ঠী পৃথক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।
৫৪. কেরেনস্কি সরকারের পতনের কারণ কী?
- কেরেনস্কি সরকারের পতনের বিভিন্ন কারণ লক্ষ করা যায়—১. সংস্কারের ব্যর্থতা : রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়। ২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চালিয়ে যায় এবং রাশিয়ার ভেতরে জার্মানির অগ্রগতিকে আটকাতে ব্যর্থ হন। ৩. লেনিনের ভূমিকা : লালফৌজ বাহিনী কর্তৃক কেরেনস্কি সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা দখলের (৭ নভেম্বর, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে) ঘটনায় কেরেনস্কি সরকারের পতন ঘটে ।
৫৫. সোভিয়েত রাশিয়ায় কখন দ্বৈত শাসন শুরু হয় ?
- ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ায় মার্চ বিপ্লব ও নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যবর্তী কালে একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রাদেশিক সরকার ও পেট্রোগ্রাড-এ সোভিয়েত এর শাসন চলেছিল। এইভাবে রাশিয়ার এই দুই শাসনের অস্তিত্বকে লেনিন ‘দ্বৈত শক্তি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। বলশেভিক দলের নেতৃত্বে নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে বলশেভিক ও সোভিয়েতের হাতে ক্ষমতা এলে দ্বৈত শাসনের অবসান হয় ।
৫৬. ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবকে ‘নভেম্বর বিপ্লব’ ও ‘বলশেভিক বিপ্লব’ বলা হয় কেন ?
- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ‘অক্টোবর বিপ্লব’ ছিল রুশ বিপ্লবের দ্বিতীয় পর্যায়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫-২৬ অক্টোবরের এই বিপ্লবটি যেহেতু বিশ্বের প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ৭-৮ নভেম্বর তারিখে হয়েছিল তাই একে ‘নভেম্বর বিপ্লব’ বলা হয় । যেহেতু বলশেভিক দলের নেতৃত্বে এই বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছিল তাই তা ‘বলশেভিক বিপ্লব’ নামেও পরিচিত হয়।
৫৭. সেভরের সন্ধির গুরুত্ব কী ?
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে মিত্রপক্ষের সঙ্গে তুরস্কের সেভর-এর সন্ধি হয়। এই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল হয়েছিল ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট। গুরুত্ব—১. তুরস্ক সাম্রাজ্যের পতন : ইউরোপের তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে এবং তুরস্কের সুলতান সিংহাসনচ্যুত হন। ২. ক্ষতিপূরণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য তুরস্ককে দায়ী করে তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়।
৫৮ . ‘হুভার মোরাটোরিয়াম’ বলতে কী বোঝো?
- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক মহামন্দার প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হুভার ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন যুদ্ধঋণ ও অন্যান্য ঋণ বাবদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী এক বছর পরিশোধ করতে হবে না। এই ঘোষণা ‘হুভার মোরাটোরিয়াম’ বা ‘হুভার স্থগিতকরণ’ নামে পরিচিত।
৫৯. ‘কালো বৃহস্পতিবার’ ও ‘কালো মঙ্গলবার’ কী?
- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট শেয়ার মার্কেটে ধস নামে এবং তা পরবর্তী মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয় । এর ফলে নিউইয়ার্কের স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট বিপর্যস্ত হয়ে যায় ও অর্থনৈতিক মহামন্দার সূচনা হয়। তাই নেতিবাচক অর্থে ওই দু’দিনকে যথাক্রমে ‘কালো বৃহস্পতিবার’ ও ‘কালো মঙ্গলবার’ বলা হয়।
৬০. মহামন্দার অবসান কিভাবে ঘটে ?
- এফ ডি রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নতির জন্য ব্যাপক সংস্কারমূলক ব্যবস্থা বা ‘নিউ ডিল’ কর্মসূচি গ্রহণ করেন। মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটে ও শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতি শুরু হয় । এই সমস্ত কিছুর পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু ও শেষকে কেন্দ্র করে মার্কিন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটলে মহামন্দারও অবসান ঘটে।
৬১. ভাইমার প্রজাতন্ত্র কেন ব্যর্থ হয়েছিল ?
- ভাইমার প্রজাতন্ত্র ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল—১. প্রতিষ্ঠা কাল থেকেই এই প্রজাতন্ত্র জনপ্রিয় ছিল না। ২. ভাইমার প্রজাতন্ত্রের আসীন সরকারগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ৩. হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিদলের উত্থান ও ক্ষমতা দখলের ঘটনা এই প্রজাতন্ত্রের পতন নিশ্চিত করেছিল।
৬২. ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য উল্লেখ করো?
- ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের মধ্য বিভিন্ন সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়—১. রাজনৈতিক সাদৃশ্য : গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় এক নায়কতন্ত্রী শাসন লক্ষ করা যায়। দলের একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য বাক্-স্বাধীনতা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্র কর্তৃক কেড়ে নেওয়া হয়। ২. অর্থনৈতিক সাদৃশ্য : উভয় মতাদর্শেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত করার উপর জোর দেওয়া হয়।
৬৩. স্পেনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল ?
- একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভারতের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার সূচনা হয়। যথা—১. ভারতীয় সমাজতন্ত্রী নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায় স্পেনের একনায়কতন্ত্রের সমালোচনা করেন। ২. মহত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্পেনে গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।
৬৪. মুসোলিনি কে?
- মুসোলিনি ছিলেন ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের নেতা। ১৯২২ সালে ইতালির মন্ত্রী হয়ে মুসোলিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী (ইল ডুচে) হয়েছিলেন।
৬৫. হিটলার কে?
- হিটলার ছিলেন জার্মানির নাৎসিদলের নেতা এবং জার্মানির চ্যান্সেলর (১৯৩৩)। পরে জার্মানির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন।
৬৬. ফ্যুয়েরার ও ইল ডুচে কারা?
- হিটলার জার্মানির সর্বময় ক্ষমতা দখল করে ‘ফ্যুয়েরার’ বলে খ্যাত হয়েছিলেন। ‘ফ্যুয়েরার’ কথার অর্থ সর্বোচ্চ শাসক।
- মুসোলনি ইতালির সর্বময় ক্ষমতা দখলের পর ‘ইল ডুচে’ বলে খ্যাত হন।
৬৭. জাতিসংঘ কেন গঠিত হয়?
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ খ্রি. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১. আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায়; ২. ন্যায় ও সততার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৬৮. শান্তি-রুটি-জমি শ্লোগান কী?
- রুশ বিপ্লবের পূর্বে লেনিন ঘোষণা করেন যে, বলশেভিকরা ক্ষমতা লাভ করলে—১. সৈন্যরা পাবে শান্তি; ২. শ্রমিকরা পাবে রুটি; এবং ৩. কৃষকরা পাবে জমি। লেনিনের এই শ্লোগান রাশিয়ার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
বিংশ শতকের ইউরোপ পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্প-ভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) | তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ৫ম অধ্যায় বিংশ শতকে ইউরোপ থেকে ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
নবম শ্রেণির অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন
- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক
- বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়ন
- উনবিংশ শতকে ইউরোপ
- শিল্পবিপ্লব
- বিংশ শতকে ইউরোপ
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
- জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ