সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা, Notes on Class X History : দশম শ্রেণির ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো।
সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা, Class 10 History
আলোচিত টপিক
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (প্রশ্নমান – 2)
প্রশ্ন–উনিশ শতকের বাংলার সমাজজীবনের প্রতিফলন লক্ষ করা যায় এমন দুটি পত্রিকার নাম লেখ।
- ক. বামাবোধিনী পত্রিকা [সম্পাদক উমেশ্চন্দ্র দত্ত]
- খ. হিন্দু প্যাট্রিয়ট [সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]
- গ. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা [সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার]
প্রশ্ন–উনিশ শতকের বাংলার সমাজজীবনের প্রতিফলন লক্ষ করা যায় এমন দুটি গ্রন্থের নাম লেখ।
- নীলদর্পণ – দীনবন্ধু মিত্র
- হুতোম প্যাঁচার নকশা – কালীপ্রসন্ন সিংহ
প্রশ্ন—হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকার গুরুত্ব লেখ।
প্রশ্ন—বামাবোধিনী পত্রিকার উদ্দেশ্য লেখ।
- বামাবোধিনী পত্রিকা ছিল নারী কেন্দ্রিক। বাঙালি নারীদের শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি নারীদের প্রতি বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই ছিল এই পত্রিকার উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন—বামাবোধিনী পত্রিকায় কোন কোন বিষয় প্রকাশিত হত?
- সমসাময়িক সমাজের ধর্ম, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গ্রাম্য চিকিৎসা, শিশু পরিচর্যা প্রভৃতি বিষয় এই পত্রিকায় ছাপা হতো।
প্রশ্ন–ভারতের প্রথম ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকার নাম লেখ?
- ইংরেজি : বেঙ্গল গেজেট [সম্পাদক অগাস্টাস হিকি]
- বাংলা : দিগদর্শন [ সম্পাদক মার্শম্যান]
প্রশ্ন–নীলচাষিদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদী কন্ঠ হিসাবে দুটি পত্রিকার নাম লেখ?
পত্রিকার নাম—
- ক) হিন্দু প্যাট্রিয়ট [সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়]
- খ) গ্রামবার্তা প্রকাশিকা [সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার]
প্রশ্ন—হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার গুরুত্ব লেখ।
- ১। নীলচাষিদের উপর নীলকরদের অত্যাচারের কথা এই পত্রিকায় প্রকাশ পেত।
- ২। নারীশিক্ষা ও হিন্দু বিধবা বিষয়ে উৎসাহমূলক রচনা প্রকাশ পেত।
প্রশ্ন—হুতোম প্যাঁচার নকশার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
- পুরোনো কলকাতার কথা, গভীর সমাজচেতনা ও হাস্যরস এই গ্রন্থে আছে।
- সমকালীন সামাজিক প্রেক্ষিতে এই গ্রন্থ ভণ্ডামি ও অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট ছিল।
প্রশ্ন—হুতোম প্যাঁচার নকশায় কোন কোন বিষয় সমালোচিত হত?
- কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর গ্রন্থে সমকালীন সমাজের নানাদিক নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন—ক] ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কলকাতার বাবু সমাজের কর্মকাণ্ড। খ] কলকাতায় বসবাসকারী মানুষের ফন্দিফিকির-জোচ্চুরি বিষয় উল্লেখ করেছেন।
প্রশ্ন—নীলদর্পণের গুরুত্ব লেখ।
- নাটকটি নীলবিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত। নীলচাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের, মহাজনদের অত্যাচারের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। তাই এই নাটকটির গুরুতে অপরিসীম।
প্রশ্ন—দেশীয় শিক্ষা বলতে কী বোঝ?
- ইংরেজি শিক্ষা প্রচলনের পূর্বে ভারতে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা শিক্ষাব্যাবস্থাকে ‘দেশীয় শিক্ষা’ বলা হয়েছে।
- সাধারণত পাঠশালা, টোল, মাদ্রাসা, মক্তব প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে দেশীয় শিক্ষা প্রদান করা হত।
প্রশ্ন–১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের গুরুত্ব লেখ ?
- 1823 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে এই আইনের গুরুত্ব নিম্নরূপ—
- ক. ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা ঘোষিত হয়।
- খ. ভারতে জনশিক্ষার দায়িত্ব কোম্পানির উপর পড়ে। পরবর্তীকালে এই সনদ আইনের কারণে ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বে’র সূচনা হয়।
প্রশ্ন–‘জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ কেন গঠিত হয় ?
- 1823 খ্রি: এই কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গঠন করেন লর্ড হেস্টিংস।
- কারণ- ক. ভারতে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। খ. শিক্ষার উন্নতিতে কী কী করা উচিত তা সুপারিশ করা।
প্রশ্ন–‘প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী’ কারা ?
- প্রাচ্যবাদী— যেসব শিক্ষাবিদরা দেশীয় শিক্ষার উন্নতিতে সরকারি টাকা ব্যয় করার পক্ষপাতী ছিলেন। যথা- কোলব্রুক, এইচ টি প্রিন্সেপ, উইলসন প্রমুখ।
- পাশ্চাত্যবাদী— যাঁরা পাশ্চাত্য অর্থাৎ ইংরেজি শিক্ষার উন্নতিতে সরকারি টাকা ব্যয় করার পক্ষপাতী ছিলেন। যথা- অ্যালেকজান্ডার ডাফ, কলভিন, সান্ডার্স প্রমুখ।
প্রশ্ন—প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কী? বা ‘ইভানজেলিক্যাল আন্দোলন’ কী?
- 1813 সালের সনদ আইন অনুযায়ী শিক্ষাখাতে যে ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করা বলা, তা কোন ক্ষেত্রে ব্যয় হবে তা নিয়ে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। একেই ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব’ নামে অভিহিত করা হয়।
- 1835 সালে ‘মেকলে মিনিট’ প্রকাশ পেলে এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।
প্রশ্ন—চুঁইয়ে পড়া নীতি কী?
- টমাস মেকলে তাঁর প্রস্তাবে জানান যে, দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তন করা হবে এবং এই শিক্ষা উচ্চশ্রেণির মাধ্যমে নিচের শ্রেণিতে প্রসারিত হবে। জল চুঁইয়ে পড়ার নীতি অনুযায়ী মেকলের এই তত্ত্ব ‘চুঁইয়ে পড়া তত্ত্ব’ নামেই পরিচিত হয়।
প্রশ্ন—মেকলে মিনিট” কী?
- 1835 সালে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
- টমাস মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের পক্ষে যে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, তা “মেকলে মিনিট” নামে পরিচিত।
প্রশ্ন–‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ কাদের বলে?
- ১৮০০ খ্রি: শ্রীরামপুরে ব্যপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানকার উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান ও উইলিয়ম ওয়ার্ড— এই তিনজন পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্যে ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে অভিহিত হন।
প্রশ্ন—ডেভিড হেয়ার বিখ্যাত কেন?
- ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের অবদান রয়েছে।
- হেয়ার স্কুল গড়ে তোলা ছাড়াও হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। এছাড়া ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ এবং ‘ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি’ বিদ্যালয় শিক্ষা প্রসারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রশ্ন—মিশনারিদের উদ্যোগে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে?
- খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে উঠেছিল— শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন, কলকাতা জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউশন, লন্ডন মিশনারি সোসাইটি প্রভৃতি।
প্রশ্ন—‘ঊডের প্রতিবেদন’ বা ‘ম্যাগনাকার্টা’ কী?
- ১৮৫৪ সালে চার্লস উড এই প্রতিবেদন পেশ করেন।
- এটি ভারতের শিক্ষাবিষয়ক একটি প্রতিবেদন, যা ম্যাগনাকার্টা নামেও পরিচিত। প্রেসিডেন্সি শহরে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মান করা কথা এই রিপোর্টে বলা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৫৭ সালে এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
প্রশ্ন—পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রামমোহনের দুটি উদ্যোগ লেখ।
- রামমোহন রায় নিজে অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
- হেয়ার স্কুল, হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি সহায়তা করেছিলেন।
প্রশ্ন–এশিয়াটিক সোসাইটি কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন ?
- স্যার উইলিয়াম জোনস এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
- এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে।
- প্রতিষ্ঠার কারণ–-ভারতের প্রাচীন সভ্যতার চর্চা, ভারতীয় সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদ ইত্যাদি কারণে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন–‘স্কুল বুক সোসাইটি’ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
- ডেভিড হেয়ার ১৮১৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
- উদ্দেশ্য—১. ইংরেজি ও ভারতীয় ভাষায় ভালো পাঠ্যবই প্রকাশ করা। ২. শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
প্রশ্ন–মধুসূদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন?
- আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত একজন উল্লেখযোগ্য চিকিৎসক ছিলেন। কুসংস্কারকে তোয়াক্কা না করে ভারতীয় চিকিৎসক হিসেবে প্রথম শব-ব্যবছেদ করেন। তিনি একজন প্রথম শ্রেণির সার্জেন ছিলেন।
প্রশ্ন–উনিশ শতকে নারী শিক্ষায় উদ্যোগী দুজনের নাম লেখ।
- দুজন ব্যক্তিত্ব : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং ডেভিড হেয়ার।
প্রশ্ন–পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে উদ্যোগী দুজনের নাম লেখ?
- দুজন বিদেশি – ডেভিড হেয়ার ও বেথুন সাহেব ।
- দুজন ভারতীয় – রাজা রামমোহন রায় এবং রাধাকান্ত দেব।
প্রশ্ন–নারী শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন?
- বিদ্যাসাগরের সহায়তায় বেথুন সাহেব গড়ে তোলেন ‘বেথুন স্কুল’।
- নারীশিক্ষার প্রসারে গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন।
প্রশ্ন—ব্রাহ্মসমাজের উদ্দেশ্য লেখ।
- রাজা রামমোহন রায়ের ‘ব্রাহ্মসমাজে’র উদ্দেশ্য ছিল—ক] ব্রহ্মের উপাসনা করা। খ] হিন্দু ধর্মে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করা।
প্রশ্ন—আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
- ১৮১৫ সালে রামমোহন রায় এই আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
- বেদ-উপনিষদ ব্যাখ্যার মাধ্যমে ব্রহ্মবাদ অর্থাৎ একেশ্বরবাদ প্রচার করা। এছাড়া নানা ধর্মীয় সমস্যার আলোচনা এবং সমাধানের বিষয় এই সভায় আলোচিত হত।
প্রশ্ন—সমাজসংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীদের ভূমিকা লেখ?
- ডিরোজিও-র অনুগামীরা হিন্দুধর্মের প্রচলিত কিছু সংস্কার যথা, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, কন্যাপণ, সতীদাহ প্রথা, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল।
প্রশ্ন—নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয় কেন?
- নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল বিভিন্ন কারণে, যথা এই আন্দোলন ছিল শহরকেন্দ্রিক, সমাজের সাধারণ মানুষের মাঝে এর কোনো সুপ্রভাব পড়েনি।
- পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি অন্ধ অনুসরণ এই আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন–‘নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী’ বলতে কী বোঝ? বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ কারা?
- হিন্দু কলেজের শিক্ষক হেনরি ডিরোজিও সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। তাঁর অনুগামীদের ‘নব্যবঙ্গ’ বা ‘ইয়ংবেঙ্গল’ বলা হয়।
- এই দলের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামতনু লাহিড়ি, রাধানাথ শিকদার, রসিককৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ।
প্রশ্ন–কয়েকজন ডিরোজিও পন্থীর নাম লেখ?
- ]রামতনু লাহিড়ি, রাধানাথ শিকদার, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, দক্ষিনারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
প্রশ্ন–ব্রাহ্মসমাজ ভেঙে কী কী শাখার উদ্ভব ঘটে?
আদি ব্রাহ্মসমাজ | দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর |
ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ | কেশবচন্দ্র সেন |
নববিধান সমাজ | কেশবচন্দ্র সেন |
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ | শিবনাথ শাস্ত্রী |
প্রশ্ন–‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ কী?
- শ্রীরামকৃষ্ণদেব ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের’ আদর্শ তুলে ধরেন।
- রামকৃষ্ণ ধর্মীয় ব্যাপারে ‘যত মত তত পথ’ আদর্শ অনুসরণ করতেন। সব ধর্মই তাঁর কাছে সত্যস্বরূপ ছিল। ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সহনশীলতার পরিবেশ গড়ে উঠতে এই আদর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রশ্ন—নব্য বেদান্তবাদ কী?
- স্বামী বিবেকান্দ ভারতের আধ্যাত্মবাদের সঙ্গে পাশ্চাত্যের কর্মযোগের মেলবন্ধন ঘটিয়ে নতুন আদর্শ প্রচার করেন, যা ‘নব্য বেদান্ত’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন—লালন ফকির স্মরণীয় কেন?
- লালন ফকির ছিলেন বাউল সাধক। বাউল গানের মধ্যে দিয়ে তিনি মানব ধর্মের জয়গান গেয়েছেন।
প্রশ্ন–বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বিখ্যাত কেন?
- বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম একজন নেতা ছিলেন। পরবর্তীকালে ইনি বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তা প্রচার করেন।
প্রশ্ন–বাংলার নবজাগরণ বলতে কী বোঝ?
- উনিশ শতকে বাংলায় বহু শিক্ষিত মানুষের হাত ধরে সমাজ, শিক্ষা, ধর্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন ঘটেছিল, যা সাধারণ ভাবে ‘বাংলার নবজাগরণ’ নামে অভিহিত হয়।
- যদিও এ বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন (প্রশ্নমান – 4)
1) ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের প্রভাব কী ছিল? অথবা, উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব কী ছিল?
ভূমিকা: উনিশ শতকে ভারতে খ্রিস্টান মিশনারি ও দেশীয় ব্যক্তিদের এবং সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। এইরূপ পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সুপ্রভাব ও কুপ্রভাব দুই-ই ছিল।
সুপ্রভাব: (i) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ফলে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞানচর্চার পথ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার-এর প্রভাব এ যুগে ক্রমশ কমে আসতে থাকে। (ii) উনবিংশ শতকে পাশ্চাত্য সাহিত্য, দর্শন, শিল্প প্রভৃতির চর্চার ফলে ভারতীয়দের মধ্যে গণতন্ত্র ও মানবতাবাদের ধারণার উদ্ভব ঘটে। (iii) ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে ভারতবর্ষের শিক্ষিত সমাজ ইউরোপীয় রাজনীতি, সাহিত্য, দর্শন, অর্থনীতির সংস্পর্শে এসে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবে জাগরিত হয়।
কুপ্রভাব: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের মধ্যে ছিল—(i) ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির অবহেলা (i) বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষার অবহেলা (i) অবহেলিত নারীশিক্ষা ও গণশিক্ষা প্রভৃতি।
উপসংহার: নানারূপ দুর্বলতা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ভারতে এক নবযুগের সূচনা করে। সমাজের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও ঘৃণ্য মূল্যবােধকে দূর করার জন্য ঊনবিংশ শতাব্দীতে বহু সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন শুরু হয় এবং পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলন ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় সংগ্রামের পটভূমি তৈরি করে দেয়।
2) ‘হুতোম প্যাচার নক্শা’ গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কী প্রতিফলন লক্ষ করা যায়?
‘হুতোম পাচার নক্শা’-য় কালীপ্রসন্ন সিংহ তৎকালীন কলকাতা ও তার আশপাশের অঞ্চলের ধনী ও শিক্ষিত বাঙালি সমাজের তথা বাবু সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। এরা ব্রিটিশ আমলে অর্থসম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছিল।
শ্রেণিবিভাজন: এই গ্রন্থে যাদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে তারা লেখকের নিজের শ্রেণির। লেখক তাদের তিন ভাগে ভাগ করেছেন। এরা হলেন
১] ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী। ২] ইংরেজি শিক্ষিত কিন্তু অন্ধ অনুকরণকারী নন এবং ৩] ইংরেজি না জানা গোঁড়া হিন্দু।
পরিচয়: [ক] এই সময়ের সমাজে এই ব্যক্তিদের প্রায় সকলে কমবেশি ফন্দিফিকির করে বা অসৎ উপায়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। [খ] এই সময়ে কলকাতা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী শহরতলিতে এক শ্রেণির মানুষ ভ্রষ্টাচারপূর্ণ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে শুরু করেছিল। [গ] এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় তৎকালীন সমাজে হিন্দু, ব্রাক্ম, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই গোঁড়া প্রকৃতির মানুষেরা মানবিকতার উপরে ধর্মীয় গোঁড়ামিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সমাজে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বিধবাবিবাহের পক্ষে ও বিপক্ষে জনমত যে দ্বিধাবিভক্ত ছিল তাও জানা যায়।
3) জাতীয়তাবাদ বিকাশে নীলদর্পণ’ নাটকটির ভূমিকা লেখো।
ভূমিকা: জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিকাশে সাহিত্য, সংবাদপত্র এবং বিশেষ কিছু ঘটনা এদেশীয় মানুষদের এক সূত্রে বাঁধতে সাহায্য করে। এই সাহিত্য উপাদানের মধ্যে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক’টি অন্যতম।
নীলকরদের শোষণ: নীলকর সাহেবরা বাংলার নীলচাষিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করত। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চাষি তার জমিতে নীলচাষ করতে বাধ্য হত, নীলচাষের জন্য চাষিদের আগাম টাকা বা দাদন নিতে বাধ্য করা হত।
নীলকরদের অত্যাচার: চাষিরা নীলচাষে অনিচ্ছুক হলে নীলকর সাহেবরা বিভিন্নভাবে অত্যচার করত। যেমন— চাষির গোরু-ছাগল আটক করা, চাষিদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া বা আগুন ধরিয়ে দেওয়া, চাষির ছেলেমেয়েদের বন্দি করা ইত্যাদি। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও আদালতে নীলকরদের প্রভাব ছিল।
শিক্ষিত শ্রেণির সমর্থন: নীলকরদের শোষণ, নীলচাষিদের দুর্দশা ও সংঘবদ্ধ আন্দোলন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ ইত্যাদি। ‘নীলদর্পণ’ নাটক এই ঘটনাকে জীবন্ত করে উপস্থাপিত করে। এর ফলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি নীলচাষিদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়।
মূল্যায়ন: দরিদ্র নীলচাষিদের স্থানীয় স্তরের এই আন্দোলন ভারতের জাতীয়তাবাদ গঠনের পথ প্রশস্ত করে। হিন্দু-মুসলিমদের ঐক্য, অহিংস পথে সংঘবদ্ধ আন্দোলন, ইংরেজ বিরোধিতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। ‘নীলদর্পণ’ নাটকের মাধ্যমে শিক্ষিত শ্রেণি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়।
4) ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার গুরুত্ব লেখ।
ভূমিকা: ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। যদিও এই পত্রিকা ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত হত, তথাপি সমকালীন গণসংগ্রামের কাহিনিগুলি এই পত্রিকা প্রচার করত। পত্রিকায় জাতীয়তাবাদী মনোভাব প্রকাশিত হয়।
এই সময় বাংলাদেশে কয়েকটি গণসংগ্রাম ঘটে। এগুলি ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ, নীলচাষিদের আন্দোলন ইত্যাদি।
ভূমিকা
১] ভারতের আদি অধিবাসী সাঁওতালরা রাজমহলে বসবাস করত। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী সাঁওতালদের দলবদ্ধ অভিযান, জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কাহিনি এই পত্রিকায় লেখা হয়।
২] সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। এই বিদ্রোহের আগুন ক্রমে ভারতের বিভিন্ন সেনাছাউনিতে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ বাহিনী বিদ্রোহ দমনে অগ্রসর হয়। এই যুদ্ধ-সংঘর্ষের বিবরণ এই পত্রিকা প্রচার করে।
৩] নীলচাষ বাংলার কৃষকদের জীবনে দুর্দশা সৃষ্টি করেছিল। নীলচাষ নীলকর সাহেবদের কাছে লাভজনক হলেও নীলচাষিদের সর্বনাশের কারণ ছিল। এর প্রতিবাদে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বিভিন্ন স্থানের নীলচাষিরা সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন করে। এই আন্দোলনের কাহিনি ধারাবাহিকভাবে এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
মূল্যায়ন: ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখার্জি এই গণসংগ্রামের কাহিনি প্রচারে উদ্যোগী ছিলেন। পত্রিকা একে একে ঔপনিবেশিক শাসনের নির্মম রূপ ফুটিয়ে তোলে। এজন্য পত্রিকাটি বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
5) গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’য় উনিশ শতকের বাংলা কীরূপ সমাজচিত্র প্রতিফলিত হয়েছিল?
‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ হলো বাংলা থেকে প্রকাশিত একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার, যিনি ‘কাঙাল হরিনাথ’ নামেও পরিচিত ছিলেন। এটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়।
গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তৎকালীন সমাজচিত্র
‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকা থেকে সমসাময়িককালের সমাজ সম্পর্কে জানা যায়। যথা—
১] সমাজে নারীদের দুরবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
২] জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচারের কথা প্রকাশিত হত।
৩] নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা জানা যায়।
৪] শিক্ষার প্রসারের বিভিন্ন উদ্যগের কথা জানা যায়।
মূল্যায়ন: এই পত্রিকাটি সুলভ মূল্যের ছিল। প্রকাশক হরিনাথ মজুমদার অতি দারিদ্র্যের মধ্যেও পত্রিকা প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যান। তিনি ‘কাঙাল হরিনাথ” নামে পরিচিত ছিলেন। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের বাংলার সমাজচিত্র এই পত্রিকা থেকে পাওয়া যায়।
6) ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্যপন্থী’ কারা? বা, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব’ কী? বা ‘অ্যাংলিসিস্ট ও ওরিয়েন্টালিস্ট ডিবেট’ কী?
ভূমিকা: বাংলাদেশ তথা ভারতে চিরাচরিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশরা আসার পর কলকাতায় বেশ কিছু ইংরেজি শিক্ষার স্কুল গড়ে ওঠে। এই দেশীয় ও ইংরেজি শিক্ষার সমর্থকরা দুটি দলে ভাগ হয়ে যান। যথা— প্রাচ্যপন্থী ও পাশ্চাত্যপন্থী।
প্রাচ্যপন্থী: ভারতে যে চিরাচরিত শিক্ষা প্রচলিত ছিল, তা দেশীয় শিক্ষা বা প্রাচ্য শিক্ষা নামেও পরিচিত ছিল। এই শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষা। পাঠশালা, চতুষ্পাঠী ও টোলে সংস্কৃত শিক্ষা দেওয়া হত।
মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে আরবি ও ফারসি ভাষাশিক্ষার চল ছিল। গ্রামের মসজিদের পাশে মক্তব থাকত। সেখানে মৌলবিরা আরবি ও ফারসি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা দিতেন। এই দেশীয় শিক্ষার সমর্থকরা প্রাচ্যপন্থী (Orientalist) নামে পরিচিত ছিলেন। এরা হলেন এইচ টি প্রিন্সেপ, উইলিয়াম জোন্স প্রমুখ।
পাশ্চাত্যপন্থী: কলকাতাকেন্দ্রিক কয়েকটি ইংরেজি স্কুলে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ও গণিতশিক্ষা প্রভৃতি দেওয়া হত। এই শিক্ষাকে পাশ্চাত্য শিক্ষা বলা হত। এই শিক্ষার সমর্থকদের পাশ্চাত্যপন্থী (Anglicists) বলা হত। আলেকজান্ডার ডাফ, ট্রেভেলিয়ন, মেকলে এদের নেতা ছিলেন।
মূল্যায়ন: ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে কোম্পানিকে এদেশে জনশিক্ষার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই টাকা পাওয়ার জন্য শিক্ষাবিদরা দুটি দলে বিভক্ত হন। দেশীয় শিক্ষার সমর্থকরা ‘প্রাচ্যপন্থী’ ও ইংরেজি শিক্ষার সমর্থকরা ‘পাশ্চাত্যপন্থী’ নামে পরিচিত হন। ‘মেকলে মিনিট’ প্রকাশের পর এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছিল।
7) টীকা লেখোঁ : চার্লস উডের প্রতিবেদন
‘বোর্ড অফ কন্ট্রোলে’র সভাপতি চার্লস উড ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এই নির্দেশনামা ‘চার্লস উডের প্রতিবেদন’ (Wood’s Despatch) নামে খ্যাত।
সুপারিশ: উড়ের নির্দেশনামা সুপারিশগুলি হল— ক] শিক্ষার প্রসারের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাবিভাগ গঠন করা। খ] কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। গ] সুদক্ষ শিক্ষক তৈরির জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কলেজ স্থাপন করা। ঘ] নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো।
ফলাফল: চার্লস উডের নির্দেশনামার ফলে—
ক] বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি বাংলা, বোম্বাই, পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে শিক্ষাদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন।
খ] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রথম দিকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। উডের রিপোর্টের ফলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে এটি ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এইজন্য উড-এর নির্দেশনামাকে শিক্ষার ‘মহাসনদ’ বা ‘ম্যাগনাকার্টা’ বলা হয়।
8) ভারতে ইংরেজ কোম্পানির আমলে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারি ও প্রগতিশীল ব্যক্তিদের ভূমিকা উল্লেখ করো। [অথবা] পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে বেসরকারি উদ্যোগের পরিচয় দাও।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে শাসন প্রতিষ্ঠার সূচনায় রাজ্যবিস্তার ও শাসনতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণে বেশি মনোযোগী হয়েছিল। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি পড়েছিল বিলম্বে। ভারতে সরকারিভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হয় বড়োলাট লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে।
ভারতে সরকারি প্রচেষ্টায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনের পূর্বে বেসরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়। এর দুটি ধারা ছিল–
খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রচেষ্টা: খ্রিস্টান মিশনারিগণ পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ব্যাপটিস্ট মিশনারি উইলিয়ম কেরি, মার্শম্যান ও উইলিয়ম ওয়ার্ড (শ্রীরামপুর ত্রয়ী) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশপ মিডলটন শিবপুরে ‘বিশপ কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে • কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন’, যা বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত।
প্রগতিশীল ভারতীয় ও বিদেশিদের প্রচেষ্টা: প্রগতিশীল ভারতীয় ও বিদেশিরা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল’।
১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার প্রমুখের প্রচেষ্টায় কলকাতায় ‘হিন্দু কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, বর্তমানে যেটি ‘প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচিত।
ইংরেজি ভাষায় ভালো পাঠ্যবই রচনার জন্য ডেভিড হেয়ার ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি” এবং ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি’।
10) উনিশ শতকের বাংলাদেশে নারীশিক্ষা বিস্তারে ইউরোপীয় উদ্যোগের বিবরণ দাও।
সূচনা: আঠারো শতক ছিল ভারতের শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক ‘অন্ধকার যুগ’। উনিশ শতকে সেই অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে। এই সময় থেকে ইউরোপীয় উদ্যোগে নারীশিক্ষার সূচনা হয়।
মিশনারি উদ্যোগ: বাংলাদেশে নারীশিক্ষা বিস্তারে প্রথম উদ্যোগী হয় খ্রিস্টান মিশনারিরা। তাঁরা এদেশে নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তা হল—
১] ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা
২] ফরেন স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা
ব্যক্তিগত উদ্যোগ: ড্রিংকওয়াটার বেথুন হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৪৯ খ্রি.)। মেরি কার্পেন্টার শিক্ষিকা তৈরির জন্য ফিমেল নর্মাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৬৬ খ্রি.)।
মূল্যায়ন: এই সমস্ত উদ্যোগের ফলে উনিশ শতকের বাংলাদেশে নারীশিক্ষার সূচনা হয় ও গতি আসে। রক্ষণশীল সমাজ নারীশিক্ষার বিরোধিতা করতে থাকে। কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা নারীশিক্ষাকে স্বাগত জানায়। সরকার নারীশিক্ষায় সাহায্য করে। এইভাবে উনিশ শতকের বাংলাদেশে ইউরোপীয় উদ্যোগে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটে।
11) নারী শিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান লেখ।
[] নারী শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে বিদায়াসাগরের অবদান স্মরণীয়। তাঁকে নারীশিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ বলা হয়।
[] উদ্দেশ্য—নারী শিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের উদ্দেশ্য ছিল—ক] পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মুক্তির পথ খোঁজা। খ] নারীশিক্ষার মধ্যে দিয়ে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা।
[] বিদ্যাসাগরের অবদান—
[ক] বেথুন সাহেব ১৮৪৯ সালে যে বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই স্কুল প্রতিষ্ঠায় বিদ্যাসাগরের সহযোগিতা ছিল।
[খ] বেথুন স্কুলে যাতে মেয়েরা পড়তে আসে তাঁর জন্য বিদ্যাসাগর প্রচার করেছিলেন।
[গ] বিদ্যাসাগর নিজের উদ্যোগে গ্রাম-অঞ্চলে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন, যেখানে প্রায় ১৩০০ ছাত্রী লেখাপড়া করতো। এভাবে গ্রামাঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
[ঘ] বিদ্যাসাগর নিজ চেষ্টায় গড়ে তোলেন ‘মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন’, যা বর্তমানে ‘বিদ্যাসাগর কলেজ’ নামে পরিচিত।
[] বিদ্যাসাগরের নারীশিক্ষা ও সুন্দর কু-সংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার আন্তরিক প্রয়াস চিরস্মরণীয়।
12) সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা লেখ। [অথবা] দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশবচন্দ্র সেনের অবদান লেখ।
[] রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসভা ১৮২৯ সালে ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়। সমকালিন বাংলার সমাজে এই ব্রাহ্মসমাজ ও তার আন্দোলন যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল।
[] দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর—রামমোহনের পর ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্ব দেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের আদর্শ প্রচার করার জন্য ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ প্রকাশ করেন ৷ তিনি বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরোধী এবং বিধবা বিবাহের সমর্থক ছিলেন। ব্রাহ্মসমাজ তাঁকে ‘মহৰ্ষি’ উপাধিতে ভূষিত করে।
[] কেশবচন্দ্র সেন : কেশবচন্দ্র সেন এর উদ্যমে ব্রাহ্ম আন্দোলন এক নতুন মাত্রা পায়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ‘ব্রহ্মানন্দ’ উপাধিতে ভূষিত করেন (১৮৬২ খ্রি.)। কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের আদর্শ প্রচার করার জন্য ‘দি ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে ব্রাক্মসমাজের নাম সর্বাগ্রগণ্য। কেশবচন্দ্র সেনের উদ্যোগে ব্রাষ্মসমাজের সমাজসংস্কার আন্দোলনে জোয়ার আসে। তিনি বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অস্পৃশ্যতা ও বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তিনি বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহের সমর্থনে আন্দোলন করেন।
ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের কয়েকটি দিক :
[ক] এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘তিন আইন’ পাস করে। ফলে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় ও অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়। [খ] নারীশিক্ষার প্রসার ও নারীদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন উদ্যগ। [গ] শ্রমিকদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও মদ্যপানের বিরুদ্ধে প্রচার। ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে সমাজে নারীদের অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হয়। সমাজে জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, গোঁড়ামি হ্রাস পায়।
13) ডিরোজিও ও নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সমাজ সংস্কারমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা করো। [অথবা] টীকা লেখ—ডিরোজিও ও নব্যবঙ্গ
উত্তর—হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও তৎকালীন সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। তাঁর তরুণ অনুগামীরা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ (Young Bengal) বা ‘নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী’ নামে পরিচিত। তাঁদের আন্দোলনকে ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ নামে অভিহিত করা হয়।
ডিরোজিও–ডিরোজিও ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষক নিযুক্ত হন। তাঁর দেশপ্রেম, যুক্তিবাদ, সত্যের প্রতি নিষ্ঠা তাঁর প্রতি ছাত্রদের আকৃষ্ট করেছিল। তার আকর্ষণে হিন্দু কলেজের অনেক ছাত্র তাঁর অনুগামী হয়ে উঠেছিল।
নব্যবঙগ গোষ্ঠী–ডিরোজিওর অনুগামীরা নব্যবঙ্গ বা ডিরোজিয়ান নামে পরিচিত ছিল। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রামতনু লাহিড়ি, রামগোপাল ঘোষ, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ।
কার্যকলাপ–ডিরোজিও ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’নামে একটি সমিতি গঠন করে হিন্দুসমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অনুগামী যারা তাদের উৎসাহিত করতেন।
[ক] নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করে।
[খ] তাঁরা হিন্দুসমাজের রক্ষণশীলতাকে আক্রমণ করার জন্য প্রকাশ্যে ব্রাহ্মণের উপবীত ছিঁড়ে দিতেন, এমনকি নিষিদ্ধ মাংসও খেতেন।
[গ] তাঁরা সমসাময়িক নানা বিষয়ে তাঁদের সুচিন্তিত মতামতও প্রকাশ করেছেন।
মূল্যায়ন–নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কার্যকলাপ হিন্দুসমাজে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তবে তাঁদের আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ডিরোজিওর মৃত্যুর কিছুকাল পরে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
14) শ্রীশ্রীরামকৃস্নের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’-এর আদর্শ কী ধরনের ছিল?
ভূমিকা–শ্রীরামকৃষ্ণদেব (১৮৩৬-৮৬ খ্রি.) দক্ষিণেশ্বরের কালীসাধক ও পুরোহিত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধর্ম ও সাধনপদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের’ মহান আদর্শ তুলে ধরেন।
সর্বধর্ম অনুশীলন–শ্রীরামকৃষ্ণ কালীসাধনা ছেড়ে বিভিন্ন সাধনপদ্ধতি অনুশীলন করেন। এই সাধনপদ্ধতি বিভিন্ন ধর্মমতের ছিল। যেমন—
[1] তান্ত্রিক [2] বৈষ্ণব [3] বৈদিক মার্গ [4] ইসলাম [5] খ্রিস্ট [6] বৌদ্ধ [7] জৈন
সমন্বয়–এইভাবে তিনি বিভিন্ন ধর্ম সম্বন্ধে পরিচয় এবং তাদের সাধনপদ্ধতি ও ফল বুঝতে পারেন। এরপর তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়, সব ধর্মই সত্য— ‘যত মত তত পথ’।
আদর্শ–শ্রীরামকৃষ্ণের বাণীর মূল কথা হল “শিবজ্ঞানে জীবসেবা”। এজন্য সংসার ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর দেবালয়ে থাকেন না, থাকেন জীবের মধ্যে। জীবসেবাই হল ঈশ্বরসেবা।
গুরুত্ব–শ্রীরামকৃষ্ণের উদার মতাদর্শ সনাতন হিন্দুধর্মকে উদার হতে, জাতপাতের বিভেদ ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে হিন্দুধর্ম যেমন প্রাণশক্তি ফিরে পায় তেমনি অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায়। বৈরিতা কমে এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিনাশ ঘটে।
15) টীকা লেখো : স্বামী বিবেকানন্দ
[] শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন নবভারতের রূপকার। তাঁর ধর্ম ছিল ‘Man making religion’ বা মানুষ তৈরির ধর্ম। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন পথ ও মত অবলম্বন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— বর্তমান ভারত, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য প্রভৃতি।
বিবেকানন্দের অবদান—
[ক] স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ যাকে নবভারতের আনন্দমঠ বলা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মানবসেবা।
[খ] জাতিভেদ, ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক অনাচার, অশিক্ষা, অসাম্য ইত্যাদির বিরুদ্ধে তিনি মানুষকে সোচ্চার হতে বলেছিলেন। তিনি বলতেন, কুসংস্কারহীন সমাজ নতুন দেশগঠনে সহায়তা করবে।
[গ] স্বামীজি প্রাচ্য-পাশ্চাত্য, প্রাচীন ও আধুনিক মতাদর্শ, ধনী-দরিদ্র সবার সহযোগিতায় এক নবভারত গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেন, দেশের প্রকৃত শক্তি হল দেশের শ্রমজীবীরাই।
[ঘ] স্বামীজি স্বাধীনতার একজন উগ্র সমর্থক ছিলেন। ঋষি অরবিন্দের মতে, “বিবেকানন্দই আমাদের জাতীয় জীবনের গঠনকর্তা”।
[] স্বামীজি দেশের মুক্তির জন্য যুবকদের উপর বিশেষভাবে নির্ভর করেছিলেন। তাঁকে “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক” বলে অভিহিত করা হয়।
16) উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা ও গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর–ঊনবিংশ শতকের নবজাগরণের কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন—
[1] উচ্চশ্রেণির আন্দোলন : উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণকে অনেকে এলিটিস্ট আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, এই আন্দোলন উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
[2] হিন্দুসমাজের আন্দোলন : উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ অনেকাংশে হিন্দুসমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই সময়ের সংস্কার হিন্দুধর্ম ও সমাজকে অতিক্রম করতে পারেনি।
[3] শহুরে আন্দোলন : এই নবজাগরণ ছিল শহরের শিক্ষিত, চাকুরিজীবী ও ধনী ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে এর কোনও প্রভাব ছিল না।
[4] বৈপ্লবিক পরিবর্তনে ব্যর্থ : এই সংস্কার আন্দোলনেও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা বলা হয়নি।
গুৰুত্ব: কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা উনিশ শতকের আন্দোলনকে দুর্বল করেছিল। তবে বিশ শতকের জাতীয় আন্দোলনের বীজ উনিশ শতকের নবজাগরণের মধ্যেই নিহিত ছিল।