মানুষের খাদ্য প্রশ্ন উত্তর আলোচনা : সপ্তম শ্রেণির মানুষের খাদ্য থেকে আলোচনা প্রশ্ন উত্তর।
মানুষের খাদ্য প্রশ্ন উত্তর আলোচনা, Class 7 Science
আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর
(১) খাদ্য কী ও তার উপযোগিতা কী?
[উ] আমরা যে কঠিন, অর্ধকঠিন বা তরল বস্তু গ্রহণ করে জীবনধারণ করি, তাকে খাদ্য বলে। খাদ্য আমাদের শক্তি উৎপাদন, পুষ্টি, বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
(২) খাদ্যের প্রধান উপাদান কী কী?
[উ] (i) কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, (ii) প্রোটিন, (iii) লিপিড, (iv) ভিটামিন, (v) জল, (vi) খনিজ মৌল, (vil) খাদ্যতত্ত্ব, (vill) উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক বা ফাইটোকেমিক্যালস্।
(৩) কোন ধরণের খাদ্য শক্তি উৎপাদন করে?
[উ] (i) কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, (ii) প্রোটিন, (iii) লিপিড – এই তিন প্রকার খাদ্য আমাদের শক্তি উৎপন্ন করে।
(৪) কোন ধরনের খাদ্য আমাদের রোগ প্রতিরোধ করে?
[উ] ভিটামিন, জল, খনিজ মৌল – এই তিন প্রকার খাদ্য আমাদের রোগ প্রতিরোধ করে।
(৫) কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা খাদ্যের উৎস কী?
[উ] উদ্ভিজ্জ উৎস – চাল, গম, ভুট্টা, আলু, জোয়ার, বাজরা, মটরশুঁটি, ডাল, গাজর, শাকসবজি।
প্রাণীজ উৎস – মাছ, মাংস, দুধ, মেটে, ডিম প্রভৃতি।
(৬) আমরা প্রধানত ভাত বা রুটি গ্রহণ করি কী হিসেবে?
[উ] শ্বেতসার হিসাবে।
(৭) গ্লুকোজ রক্তে অধিক পরিমাণে সৃষ্টি হলে কী হয়?
[উ] মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগের সৃষ্টি করে।
(৮) গ্লুকোজ কোথায় কীরূপে সঞ্চিত হয়?
[উ] প্রাণীজ শ্বেতসার বা গ্লাইকোজেন রূপে যকৃতে ও পেশিতে সঞ্চিত হয়।
(৯) গ্লাইকোজেন কী কাজে লাগে?
[উ] বিভিন্ন কাজ যেমন কথা বলা, হাঁটাচলা, দৌড়োনো পেশির কার্যে, হৃৎপিণ্ডের রক্তসংবহনে, ফুসফুসের শ্বাসকার্যে, অন্ত্রের খাদ্য পরিপাকে শক্তি যোগায় গ্লাইকোজেন।
(১০) প্রোটিন-এর কাজ কী?
[উ] দেহের গঠনের প্রধান অংশ, যা দেহগঠন, ক্ষয়পূরণ, শ্বাসবায়ু পরিবহণে সাহায্য করে, অ্যান্ডিবডি ও অ্যামাইনো অ্যাসিড সৃষ্টি করে।
(১১) প্রোটিনের উৎস কী?
[উ] উদ্ভিজ্জ উৎস : ডাল, গম, মটরশুঁটি, সয়াবিন এবং
প্রাণীজ উৎস – ডিম, দুধ, ছানা, পনির, মধু, মাছ, মাংস প্রচুর পরিমাণে থাকে।
(১২) অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে কী ক্ষতি করে?
[উ] ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড হিসাবে বাত, কিডনি স্টোন বিভিন্ন রোগ ঘটায়।
(১৩) কোথায় কোন প্রোটিন :
কোথায় | প্রোটিন |
পেশিতে | অ্যাকটিন, মায়োসিন |
চুল ও নখে | কেরাটিন |
রক্তে | হিমোগ্লোবিন |
অস্থি ও লিগামেন্টে | কোলাজেন |
(১৪) লিপিড-এর কাজ কী?
[উ] শক্তি উৎপাদন, তাপ সংরক্ষণ, আবরণী কলা গঠনে সাহায্য করে।
(১৫) অতিরিক্ত লিপিড কী ক্ষতি করে?
[উ] অতিরিক্ত লিপিড হৃৎপিণ্ডের ধমনি, শিরার গাত্রে সঞ্চিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে ও কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি ঘটায়।
(১৬) লিপিডের উৎস লেখ।
[উ] উদ্ভিজ উৎস – বাদাম, নারকেল তেল, সরষের তেল, সূর্যমুখী ও তিসির তেল, কাঁঠাল বীজ, আটা, গোলমরিচ, জোয়ান, সয়াবিন তেলে থাকে।
প্রাণীজ উৎস – দুধ, ডিম, ঘি, মাখন, বনস্পতি, মাছের তেল, মাংসের চর্বি, মাশরুম প্রভৃতিতে উপস্থিত থাকে।
(১৭) অতিরিক্ত লিপিড কোথায় সঞ্চিত হয়?
[উ] লিপিড আমাদের পেটে, ঘাড়ে, গলায়, উরুতে, হাতে, দেহে বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়।
(১৮) ভিটামিন কী?
[উ] খাদ্যে রোগ প্রতিরোধের যে উপাদান থাকে, তা ভিটামিন। যেমন – B কমপ্লেক্স ও ভিটামিন C।
জলে দ্রবণীয় ভিটামিন | ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন |
B কমপ্লেক্স, C | A, D, E, K |
(১৯) ভিটামিন A এর কাজ লেখো।
[উ] চোখের গঠনে, ত্বক উজ্জ্বল ও নরম করতে সাহায্য করে।
(২০) ভিটামিন A এর অভাবে কী হয়?
[উ] রাতকানা রোগ, অন্ধত্ব, মূত্রনালি বা বৃক্কে পাথর সৃষ্টি হয়।
(২১) ভিটামিন A এর উৎস লেখো।
[উ] গাজর, কুমড়ো, পালং শাক, নটে শাক এবং দুধ, ডিম, ঘি, ছানা, মাংসে ভিটামিন A থাকে।
(২২) ভিটামিন D এর কাজ লেখো।
[উ] অস্থি ও দাঁতের গঠন ঠিক রাখে।
(২৩) ভিটামিন D এর অভাবে কী হয়?
[উ] শিশুদের রিকেট, বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ দেখা যায়। দাঁতের গঠনে দেরি হয়।
(২৪) ভিটামিন D কিসে পাওয়া যায়?
[উ] কড, হাঙর মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, গোরুর দুধ, মাখন ও ঘি-তে পাওয়া যায়।
(২৫) ভিটামিন E এর কাজ লেখো।
[উ] ত্বক, লোহিত কণিকা গঠন, হাড় দাঁত ও খাদ্যনালির গঠনে সাহায্য করে।
(২৬) ভিটামিন E এর অভাবে কী হয়?
[উ] অ্যানিমিয়া, পেশির বিকৃতি দেখা যায়।
(২৭) ভিটামিন E এর উৎস লেখো।
[উ] বাদাম ও তৈলবীজ, দানাশস্য, মিলেট, শুঁটি প্রভৃতি থেকে পাওয়া যায়।
(২৮) ভিটামিন K এর কাজ লেখো।
[উ] রক্ততঞ্চন ঘটাতে সাহায্য করে কাজ
(২৯) ভিটামিন K এর অভাবে কী হয়?
[উ] রক্ত তঞ্চন ব্যাহত হয়।
(৩০) ভিটামিন K এর উৎস লেখো।
[উ] সবুজ শাকসবজি, দানাশস্য, তরকারি, ডাল, দুধ, ডিম, সামুদ্রিক মাছ থেকে পাওয়া যায়।
(৩১) ভিটামিন B কমপ্লেক্স এর কাজ লেখো।
[উ] লোহিত রক্তকণিকার বৃদ্ধি ঘটায়।
(৩১) ভিটামিন B কমপ্লেক্স-এর অভাবে কী হয়?
[উ] বেরিবেরি রোগ হয়। ঠোঁটে ঘা, জিভে ঘা, পেলেগ্রা রোগ, অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা যায়।
(৩২) ভিটামিন B কমপ্লেক্স এর উৎস লেখো।
[উ] দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, দানাশস্য, বাঁধাকপি, মূলোশাক, লংকা, ছোটো মাছ প্রভৃতিতে থাকে।
(৩৩) ভিটামিন C এর কাজ লেখো।
[উ] দাঁতের গঠন, হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকার গঠনে সাহায্য করে।
(৩৪) ভিটামিন C এর অভাবে কী হয়?
[উ] স্কার্ভি, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, রক্তাল্পতা রোগ দেখা যায়।
(৩৫) ভিটামিন C এর উৎস লেখো।
[উ] আমলকী, পেয়ারা, টক জাতীয় ফল, কমলালেবু, টমেটো, আঙুর, কলা, আপেল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়।
(৩৬) কয়েকটি খনিজ মৌলের নাম লেখো।
[উ] ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, আয়োডিন ইত্যাদি।
(৩৭) ক্যালশিয়াম এর কাজ কী?
[উ] রক্ত জমাট বাঁধতে ও পেশি সংকোচনে সাহায্য করে। দাঁত ও হাড়ের গঠনে।
(৩৮) সোডিয়াম এর কাজ কী?
[উ] জলের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখতে, রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
(৩৯) আয়রন এর কাজ কী?
[উ] অক্সিজেন পরিবহণে সাহায্য করে, লোহার শোষণে সাহায্য করে।
(৪০) আয়োডিন এর কাজ কী?
[উ] মানসিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
(৪১) ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্লুওরিন কীসে সাহায্য করে?
[উ] দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে।
মৌলের অভাব | রোগ |
সোডিয়ামের অভাবে | উচ্চ রক্তচাপ |
আয়রনের অভাবে | অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা |
আয়োডিনের অভাবে | গলগণ্ড |
ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস-এর অভাবে | হাড় ভেঙে যাওয়া, দাঁতের সমস্যা, হাড় ফুটো হয়ে যাওয়া |
(৪২) জীবদেহে জলের উৎস লেখ।
[উ] পানীয় জল, ফলের রস, তরমুজ, শসা, বিভিন্ন তরল পানীয়, ডাবের জল, লেবু ও বিভিন্ন খাদ্য থেকে পাওয়া যায়।
(৪৩) জলের চাহিদা কখন বৃদ্ধি পায়?
[উ] ঘাম, ডায়ারিয়া হলে জলের চাহিদা দেহে বৃদ্ধি পায়।
(৪৪) খাদ্যতন্তু পাওয়া যায় কোথা থেকে?
[উ] সজনে ডাঁটা, বাঁধাকপি, ওটস্, বীজের খোসা, আপেল, ভুসি প্রভৃতি।
(৪৫) ফাইটোকেমিক্যালস্ বা উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক এর কাজ লেখো।
[উ] হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়ায় সাহায্য করে, ক্যানসার থেকে প্রতিরোধ করে, অকাল বার্ধক্যের থেকে রক্ষা করে।
(৪৬) ফাইটোকেমিক্যালস্ বা উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক কীসে পাওয়া যায়?
[উ] আঙুর, কুমড়ো, হলুদ, টমেটো, গাজর, পেঁপে, তরমুজ, আম, বিট, চা, বেদানা।
(৪৭) অপুষ্টির জন্য দুটি রোগের নাম লেখো।
[উ] ম্যারাসমাস, কোয়াশিওরকর। এই দুটি রোগ শিশুদের দেখা যায়।
(৪৮) ম্যারাসমাস রোগ কেন হয়?
[উ] প্রোটিন এর অভাব ঘটলে।
(৪৯) BMI = Body Mass Index
ওজন ÷ উচ্চতা²
(৫০) প্রাকৃতিক খাদ্য কাকে বলে?
[উ] যেসব খাদ্য প্রকৃতি থেকে আমরা সরাসরি পাই বা গ্রহণ করি, যেমন বিভিন্ন প্রকার ফল বা ফলের রস।
(৫১) প্রক্রিয়াজাত খাদ্য কী?
[উ] যে সমস্ত খাদ্য প্রকৃতি থেকে পাওয়ার পর প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যেমন-আচার, আমসত্ত্ব প্রভৃতি।
(৫২) সংশ্লেষিত খাদ্য কাকে বলা হয়?
[উ] যে সমস্ত খাদ্য বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণে প্রস্তুত হয়। যেমন-সফট্ ড্রিঙ্কস, পেস্ট্রি, বার্গার, আইসক্রিম প্রভৃতি।
(৫৩) সংশ্লেষিত খাদ্য ক্ষতিকর কেন?
[উ] ভেজাল বা কৃত্রিম রং মেশানো খাবার খেলে আমাদের শরীরের প্রভূত ক্ষতি হয়। হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, বৃক্ক, অস্থি ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়।
(৫৪) মানুষের দেহে কোথায় কোথায় জল থাকে?
[উ] মুখের লালারস, যকৃতের পিত্তে, হৃৎপিন্ডের রক্তে, মূত্রথলির মূত্রে, চোখের অশ্রুতে, ত্বকের ঘামে।
(৫৫) সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে?
[উ] উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য জল শোষণ করে পাতায় পৌঁছায়, আলোক ও CO₂ এবং ক্লোরোফিল-এর সাহায্যে খাদ্য প্রস্তুত করে যা জীবের শক্তির চাহিদা মেটায়।