সমাজসংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখ

সমাজসংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখ

ভূমিকা

ঊনবিংশ শতকে ভারতে বিরল যে-ক’জন ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১ খ্রি.)। সমাজ সচেতন ও মানবতাবাদী বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলার নবজাগরণের প্রতিমূর্তি। শিক্ষাসংস্কার, সমাজসংস্কারে তাঁর অবদান অবশ্য স্মর্তব্য। সমাজসংস্কারে তাঁর অবদান আলোচিত হলো—

(ক) বিধবাবিবাহ

বিদ্যাসাগর হিন্দু বালাবিধবাদের জীবনের করুণ দশা দেখে বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করার জন্য এবং বিধবাবিবাহ প্রবর্তনের আন্দোলনে নামেন। বিধবাবিবাহের পক্ষে তিনি দেশে প্রবল আলোড়ন ছড়িয়ে দেন। (১) তিনি হিন্দুশাস্ত্র ‘পরাশর সংহিতা’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত। (২) বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না এবিষয়ে তিনি দুটি পুস্তিকা রচনা করেন। (৩) বিধবাবিবাহ আইনসিদ্ধ করার জন্য তিনি শিক্ষিত জনগণের স্বাক্ষর আদায় করে আবেদন পাঠান। (৪) অবশেষে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই লর্ড ডালহৌসি “বিধবাবিবাহ আইন” পাস করেন। (৫) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর বাংলায় প্রথম বিধবাবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। পাত্র ছিলেন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন এবং পাত্রী ছিলেন কালীমতি দেবী। ঈশ্বরচন্দ্র নিজ পুত্র নারায়ণচন্দ্রেরও বিধবা পাত্রীর সঙ্গে বিবাহ দেন।

আরো পড়ুন :  ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা ও প্রসার আলোচনা কর

(খ) বহুবিবাহের বিরোধিতা

বিদ্যাসাগর তৎকালীন হিন্দুসমাজে প্রচলিত বহুবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। (১) বহুবিবাহপ্রথা নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি ৫০ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংবলিত এক আবেদনপত্র সরকারের কাছে পাঠান। (২) বিদ্যাসাগর ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে বহুবিবাহের বিরুদ্ধে দুটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, বহুবিবাহ অশাস্ত্রীয়। বিদ্যাসাগরের প্রচার ও শিক্ষাবিস্তারের ফলে বহুবিবাহের প্রকোপ অনেক হ্রাস পায়।

মূল্যায়ন

ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায় বিদ্যাসাগরের অবদান অসীম। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের অন্যতম স্রষ্টা এবং নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, এই ভীরুর দেশে তিনিই একমাত্র ‘পুরুষসিংহ’।

আরো পড়ুন :  বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা কর

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সূচিপত্র

Leave a Comment

error: Content is protected !!