গঙ্গাস্তোত্রম্‌ বড়ো প্রশ্ন উত্তর, 3টি রচনাধর্মী প্রশ্ন

গঙ্গাস্তোত্রম্‌ বড়ো প্রশ্ন উত্তর : আদি শংকরাচার্য বিরচিত শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্‌ এর ১০টি শ্লোক আমাদের পাঠ্য। এই শ্লোকগুলিতে দেবী গঙ্গাকে নানা নামে অভিহিত করেছেন ভক্ত কবি। পাশাপাশি দেবী গঙ্গার মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে সুচারুরূপে।

আলোচ্য পোস্টে 3টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের নমুনা উত্তর সন্নিবেশিত হয়েছে।

গঙ্গাস্তোত্রম্‌ বড়ো প্রশ্ন উত্তর, 3টি রচনাধর্মী প্রশ্ন


[প্র] “গঙ্গাস্তোত্রম্”-এ গঙ্গার যে বর্ণনা আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো। [২০১৫/২০১৭/২০১৮] অথবা, ‘শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্‌’এর বিষয়বস্তু লেখ।

  • অদ্বৈত বেদান্তবাদের প্রবক্তা ও কবি শ্রীশংকরাচার্য তাঁর “শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্”-এ দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে ভক্তিমূলক শ্লোক রচনা করেছেন। এই স্তোত্রে সর্বত্র গঙ্গাকে সম্বোধন করে কবি তাঁর স্তুতি করেছেন এবং কাঙ্খিত বস্তুগুলি প্রার্থনা করেছেন।

মহিমা কীর্তন = কবি শংকরাচার্য গঙ্গাদেবীকে নানা বিশেষণে ভূষিত করে বলেছেন – তিনি দেবতাদের ঈশ্বরী, ঐশ্বর্যময়ী, ভগবতী, ত্রিলোক-ত্রাণকারিণী, ত্রিভুবনতারিণী, কলুষনাশিনী, শংকরমৌলিবিহারিণী, হরির চরণকমল থেকে নির্গতা, নির্মলা, পবিত্রা, পুণ্যতরঙ্গা, ভাগীরথী, সুখদা, শুভদা, পতিতোদ্ধারিণী, জাহ্নবী, ভীষ্মমাতা, ত্রিভুবনধন্যা, পারাবারবিহারিণী, নরকনিবারিণী, বসুধাহারস্বরূপা প্রভৃতি।

আরো পড়ুন :  HS Sanskrit Suggestion 2025, উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত সাজেশান ২০২৫

রক্ষাকর্ত্রী = গঙ্গার জল যে পান করে যমরাজ তাকে কখনও স্পর্শ করে না। পাপীদের উদ্ধার করেন গঙ্গা। গঙ্গাভক্তদের নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। পুনরায় মাতৃগর্ভে তাদের আর জন্ম নিতে হয় না। যারা গঙ্গার তীরে বাস করে তাদের নিবাস বৈকুণ্ঠলোকে বলে বুঝতে হবে। সকল ভক্তদের প্রতি গঙ্গার কৃপাদৃষ্টি থাকে।

কবির প্রার্থনা = অজ্ঞানী কবিকে দেবী গঙ্গা যেন কৃপা করেন। কল্পলতার মতো গঙ্গা যেন কবির সব রোগ, শোক, তাপ, পাপ, কুমতি, দুষ্কর্ম দূর করেন। এই নদীরূপী মাতার কাছে তিনি ভবসাগর থেকে উদ্ধার প্রার্থনা করেন। সেবকের আশ্রয়স্বরূপা গঙ্গার প্রতি কবির বারবার জয়ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে।

[প্র] দেবী গঙ্গার মাহাত্ম্য সংক্ষেপে লেখ। [২০১৬] অথবা, ‘ত্বমসি গতির্মম খলু সংসারে’—তাৎপর্য লেখ।

  • দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য ‘শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্‌’-এর দশটি শ্লোকে দেবী গঙ্গার মাহাত্ম্য কীর্তন প্রসঙ্গে তাঁকে নানা বিশেষণে ভূষিত করেছেন।

(অ) অভয় প্রদায়িনী : গঙ্গা নদী ভারতের অভয় প্রদায়িনী হওয়ায় দেবীতে রূপান্তরিতা হয়েছেন। পৃথিবীতে কল্পলতার মতো মানুষ যা চায় তা সবই গঙ্গা প্রদান করেন। কল্পলতার মতো তিনি মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করেন। মূল কথা ভারতের গাঙ্গেয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই উর্বর ভূমিতে পর্যাপ্ত শস্য উৎপাদনের ফলে তাদের জীবনধারণে অভয় প্রদায়িনী হয়ে ওঠেন দেবী গঙ্গা।

(আ) ভগবতী : গঙ্গার মধ্যে সম্পূর্ণ ঐশ্বর্য, শ্রী, যশঃ, জ্ঞান প্রভৃতি ছয়টি গুণ থাকায় তিনি ভগবতী এবং সুরেশ্বরী।

আরো পড়ুন :  শূদ্রক সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ, মৃচ্ছকটিকম্ নাটকের বিষয়বস্তু, Class 12 Sanskrit

(ই) ত্রিভুবনতারিণী : গঙ্গা ত্রিলোক অর্থাৎ স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালের সব দুষ্কর্মকারী, পাপী, অজ্ঞানীদের উদ্ধারকর্ত্রী বলেই তিনি ত্রিভুবনতারিণী।

(ঈ) ত্রিভুবনধন্যা : পরম পবিত্র গঙ্গাজলকে পতিত নিবারিণী বলা হয়। গঙ্গাদেবী ত্রিভুবনকে পুণ্যতা দান করে ‘ত্রিভুবনধন্যা’ হয়েছেন।

(উ) মোক্ষদাত্রী : পবিত্র গঙ্গাজল পান করলে মোক্ষ বা মুক্তি লাভ হয়। গঙ্গার জলে যিনি স্নান করেন তিনি মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করেন না এবং  মোক্ষলাভ করেন।

(ঊ) সুখদায়িনী গঙ্গা : দেবী বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা করে সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে সুখপ্রদান করেছেন।

(ঋ) পতিত ও নরকনিবারিণী : দেবী গঙ্গা পাপীদের উদ্ধার বা তাদের পাপ ও নরক গমন থেকে নিবৃত্ত করেন। অপরাধকারী ব্যক্তিদের গঙ্গা সর্বদা কৃপা করেন।

(এ) পুণ্যতোয়া গঙ্গা : গঙ্গা নদী পুণ্যতোয়া, তীর্থস্বরূপ। তার তীরে যিনি বসবাস করেন, তিনি বৈকুণ্ঠ বাসের সমতুল্য পুণ্য অর্জন করেন।

  • এইভাবে ভক্ত-কবি তাঁর সুগভীর ব্যঞ্জনায় ও সুললিত ছন্দে গঙ্গার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন।

[প্র] “শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্” অবলম্বনে যেসব পৌরাণিক কাহিনির উল্লেখ পাই তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, দেবী গঙ্গাকে শংকরমৌলিবিহারিণী, ভাগীরথী, মুনিবর-কন্যা ও ভীষ্মজননী বলা হয়েছে কেন? [২০২৩]

  • সংস্কৃত পণ্ডিত এবং দার্শনিক শংকরাচার্য শ্রীগঙ্গার অলৌকিক মাহাত্ম্য-কীর্তন করতে গিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনির উল্লেখ করেছেন। যেমন –
আরো পড়ুন :  বনগতা গুহা অর্থ, শব্দার্থ

(ক) শংকরমৌলিবিহারিণী গঙ্গা : পুরাণ মতে  রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ সগররাজার ষাট হাজার সন্তানকে উদ্ধার করার জন্য শিবকে সন্তুষ্ট করে গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে আনলে শিব তাঁকে মস্তকে ধারণ করেন। এজন্য গঙ্গার আবির্ভাব শিবের জটা থেকে—এমনই প্রচার আছে।

(খ) ভাগীরথী : ভগীরথ গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে এনেছিলেন বলেই গঙ্গার অপর নাম ভাগীরথী।

(গ) মুনিবর-কন্যা জাহ্নবী : ভগীরথ যখন গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আনছিলেন তখন তাঁর জলপ্রবাহে জহ্নু মুনির আশ্রম ও যজ্ঞের সরঞ্জাম প্লাবিত হয়, তাতে রেগে গিয়ে তিনি গঙ্গাকে পান করেন। পরে তিনি ভগীরথের স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে গঙ্গাকে তার কান বা মতান্তরে জানু দিয়ে বের করে দেন। সেইজন্য গঙ্গার অপর নাম হল “মুনিবরকন্যা জহ্নু-তনয়া জাহ্নবী”।

(ঘ) ভীষ্মজননী গঙ্গা : মহর্ষি বশিষ্ঠের অভিশাপে অষ্টবসু মানুষ রূপে পৃথিবীতে জন্ম নিতে বাধ্য হন। গঙ্গা তাদের জন্ম ও মুক্তির আশ্বাস দেন। গঙ্গা হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনুকে বিবাহ করেন। রাজা শান্তনু ও গঙ্গার অষ্টম পুত্র হলেন দেবব্রত। পরবর্তীকালে দেবব্রত বিবাহ না করা এবং সিংহাসনের দাবি না-করার কঠিন প্রতিজ্ঞার জন্য তিনি ‘ভীষ্ম’ নামে খ্যাত হন। তাই গঙ্গা হলেন  ‘ভীষ্মজননী’।

এইভাবে পণ্ডিত শংকরাচার্য গঙ্গার মাহাত্ম্য-কীর্তন প্রসঙ্গে ভারতের পুরাণ-কাহিনির উল্লেখ করেছেন।


Leave a Comment

error: Content is protected !!