গঙ্গাস্তোত্রম্ বাংলা অর্থ : আদি শংকরাচার্য বিরচিত শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ এর ১০টি শ্লোক আমাদের পাঠ্য। এই শ্লোকগুলিতে দেবী গঙ্গাকে নানা নামে অভিহিত করেছেন ভক্ত কবি। পাশাপাশি দেবী গঙ্গার মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে সুচারুরূপে।
গঙ্গাস্তোত্রম্ বাংলা অর্থ, শব্দার্থ, 10টি শ্লোক
আলোচিত টপিক
শ্লোক—১
[বাংলা অর্থ ] হে দেবী সুরেশ্বরী, ভগবতী, ত্রিভুবনতারিণী, চঞ্চল-তরঙ্গ-যুক্তা, শঙ্কর-মৌলি-বিহারিণি, নির্মলা—তোমার চরণকমলে আমার সুমতি হোক।
- সুরেশ্বরি=সুরদের ঈশ্বরী
- শঙ্কর=মহাদেব
- মৌলি=মস্তক
- মতিরাস্তাং=সুমতি থাকুক
শ্লোক—২
[বাংলা অর্থ ] হে ভাগীরথী সুখদায়িনী মা, তোমার জলের মহিমা বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রে বিখ্যাত। তোমার মহিমা আমার জানা নেই, দয়াময়ী মা আমাকে রক্ষা করো।
- ভাগীরথী=গঙ্গার অন্যনাম
- সুখদায়িনি=সুখ দানকারী
- নিগম=বেদাদি শাস্ত্র
- খ্যাতঃ=বিখ্যাত
- পাহি=ত্রাণ করো বা রক্ষা করো
- মাম্=আমাকে/ অজ্ঞানম্=জ্ঞানহীন
শ্লোক—৩
[বাংলা অর্থ ] হরির পাদপদ্ম থেকে তরঙ্গ-আকারে নির্গতা, তুষার-চন্দ্র-মুক্তোর মতো শুভ্র তরঙ্গযুক্তা গঙ্গা, আমার দুষ্কর্মের ভার দূর করো এবং এই ভবসাগর থেকে উদ্ধার করো।
- হরিপাদপদ্ম=বিষ্ণুর পাদপদ্ম
- হিম=তুষার
- বিধু=চন্দ্র
- ভবসাগর=সাগর-সংসার
- কুরু=করো
শ্লোক—৪
[বাংলা অর্থ ] তোমার শুদ্ধ নির্মল জল যে পান করেছে সে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করেছে। মা গঙ্গা, যে তোমার ভক্ত সে অমর হয়।
- জলমমলং=নির্মল জল
- নিপীতম্=পান করেছে
- খলু=নিশ্চয়ই
- যম=মৃত্যুর রাজা, মৃত্যু
- কিল=নিশ্চয়ই।
- পরমপদম্=সর্বশ্রেষ্ঠ লোক বা স্বর্গলোক
শ্লোক—৫
[বাংলা অর্থ ] হে পতিত-উদ্ধারিণী, জাহ্নবী, ভীষ্মজননী, মুনিবরকন্যা, পতিত-নিবারিণী, তুমি এই ত্রিভুবন বিখ্যাত।
- পতিতোদ্ধারিণি=পতিতদের উদ্ধারকারিনী
- জাহ্নবী=গঙ্গার অন্যনাম
- গিরিবর=পর্বতশ্রেষ্ঠ
- ভীষ্ম=পাণ্ডব ও কৌরবদের পিতামহ, ইনি গঙ্গার পুত্র
- জহ্নু=এক মুনি, যিনি গঙ্গাকে একনিমেষে পান করেছিলেন
- পতিতনিবারিণি=যে পতিতদের ত্রাতা
শ্লোক—৬
[বাংলা অর্থ ] সমুদ্র-বিহারিণী, সুন্দরী বধূদের দ্বারা চঞ্চল কটাক্ষে অবলোকিত হন দেবী গঙ্গা। পৃথিবীতে কল্পলতার মতো ফলদায়িনী গঙ্গাকে যে প্রণাম করে, সে শোকে পতিত হয় না।
- পারাবার=সমুদ্র
- বিমুখ=সুন্দরী
- কল্পলতা=কল্পতরু
- ফলদাং=ফলদায়িনী
- অপাঙ্গ=কটাক্ষ, বক্রদৃষ্টি
শ্লোক—৭
[বাংলা অর্থ ] তোমার কৃপা লাভ করে, যদি কেউ মা তোমার স্রোতে স্নান করে তবে তার আর মাতৃগর্ভে জন্মাতে হয় না। নরক-নিবারিণী, কলুষ-বিনাশিনী জাহ্নবী মা গঙ্গা তোমার মহিমা-গৌরবে তুমি শ্রেষ্ঠ।
- স্রোতঃস্নাতঃ=স্রোতে স্নানকারী
- কৃপয়া=কৃপা কর
- কলুষবিনাশিনি=পাপ বিনাশকারী
- জঠরে=মাতৃগর্ভে
- ন জাতঃ=জন্মায় না
শ্লোক—৮
[বাংলা অর্থ ] পুনরায় দেহধারণ-নিবৃত্তকারিণী, পবিত্র-তরঙ্গশালিনী, করুণ-কটাক্ষময়ী, ইন্দ্রমুকুট-মুক্ত শোভিতা চরণ, সুখপ্রদানকারী, মঙ্গলপ্রদানকারী, ভৃত্যের আশ্রয়দাত্রী মা জাহ্নবী তোমার জয় হোক।
- পুনরসৎ-অঙ্গে=পুনরায় দেহধারণ নিবৃত্ত করেন যিনি
- করুন-অপাঙ্গে=দয়ার্দ্র, কৃপাময়ী কটাক্ষে
- ইন্দ্রমুকুটমণিরাজিতচরণে=ইন্দ্রের মুকুটুমণি দ্বারা শোভিত চরণ
- সুখদে=সুখদানকারী
- শুভদে=মঙ্গল দানকারী
- ভৃত্যশরণ্যে=সেবকের আশ্রয়দাত্রী
শ্লোক—৯
[বাংলা অর্থ ] হে ভগবতী, তুমি আমার রোগ-শোক-পাপ-তাপ ও দুর্মতি দূর করো। ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ, এই পৃথিবীর হারস্বরূপা—তুমি এই সংসারে আমার একমাত্র গতি।
- তাপম্=মনোকষ্ট
- ত্রিভুবনসারে=ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ যিনি
- কুমতিকলাপম্=দুর্মতিসমূহ
- সংসার=জগৎ
শ্লোক—১০
[বাংলা অর্থ ] হে অলকানন্দা, পরম আনন্দরূপিণী, দীনজনের বন্দনীয়, তুমি আমার প্রতি করুণা করো। তোমার তীরে যার বাস, তা বৈকুন্ঠ-বাসেরই সমতুল।
- অলকানন্দা=স্বর্গের আনন্দরূপিণী অর্থাৎ দেবী গঙ্গা
- কাতরবন্দ্যে=দীনজনের বন্দনীয়
- বৈকুন্ঠ=বিষ্ণুর অধিষ্ঠান যেখানে
- তট=তীর
- নিবাসঃ=বাসস্থান
দ্বাদশ শ্রেণির সংস্কৃতের অন্য লেখা